চট্টগ্রাম ব্যুরো :
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের ৯৫ জন প্রার্থী তাদের জামানত হারিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো প্রার্থীকে জামানত রক্ষা করতে হলে মোট বৈধ ভোটের (কাস্টিং ভোট) আট ভাগের এক ভাগ থেকে অন্তত একটি ভোট বেশি পেতে হবে।
সে হিসেবে জামানাত হারানোর তালিকায় আওয়ামী লীগ ছাড়া রয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পাশাপাশি তৃণমূল বিএনপিরসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা। ১৬ আসনের প্রাপ্ত ফলাফলের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চট্টগ্রাম জেলায় মোট ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৯৯৫ জন ভোটারের বিপরীতে মোট ভোট পড়েছে ২৩ লাখ ২৩ হাজার ৮৪১টি।
যা মোট ভোটের মাত্র ৩৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। জেলায় ভোট বাতিল হয়েছে ৭৬ হাজার ৮৭০ টি।
চট্টগ্রামের দুই রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া ফালাফল তালিকা বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া বেশিরভাগ প্রার্থীই জামানত খুয়েছেন। চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছাড়া মাহবুব উর রহমান রুহেল ও স্বতন্ত্র পার্থী গিয়াস উদ্দীন ছাড়া বাকি ৫ প্রার্থীর জামানত বাতিল হয়েছে। এ আসনে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৪৬৪ ভোটের মধ্যে ১ লাখ ৪৩ হাজার ১১৭টি ভোট কাস্টিং হয়েছে। এর মধ্য বাতিল হয়েছে ১ হাজার ৯৪৫টি। জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার আইন অনুযায়ী অন্তত ১৮ হাজার ১৩২ ভোট পেতে হতো প্রার্থীদের। কিন্তু এ আসনে রুহেল ও গিয়াস ছাড়া আরও কোনো প্রার্থী নির্ধারিত ভোটের বেশি পাননি।
একই ভাবে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে নৌকার প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মো. আবু তৈয়ব ছাড়া বাকি ৭ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। এ আসনে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৭ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৫ জন ভোটার। আসনটিতে ভোট বাতিল হয়েছে ৩ হাজার ৯৪৫টি।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে মাহফুজুর রহমান ও মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী ছাড়া বাকি ৫ জন প্রার্থীইর জামানত বাতিল হয়েছে। এর আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪১ হাজার ৯০৭ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ৮৭ হাজার ৫৯১টি। বাতিল হয়েছে ৩ হাজার ৫০৫টি।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড -নগর আংশিক) আসনে এসএম আল মামুন ছাড়া বাকি ৬ প্রার্থীর জামানত বাতিল হয়। এ আসনে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ২৭ হাজার ১৭২ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯৮৪টি। বাতিল হয়েছে ৩ হাজার ৮৮৭টি।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-নগর আংশিক) আসনে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী ছাড়া বাকি ৫ প্রার্থীর জামানত বাতিল হয়। এ আসনে ভোট পড়েছে ৯৮ হাজার ১০৭টি। বাতিল হয়েছে ৫৩৯টি। চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়ী হওয়া একমাত্র আসনটিতে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৫৫ জন। এর আসনে ভোটের হার মাত্র ২০ দশমিক ৬২ শতাংশ।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী ছাড়া বাকি ৪ প্রার্থীর জামানত বাতিল হয়। চট্টগ্রামের আসনগুলোতে এ আসনে সবচেয়ে বেশি ভোট কাস্টিং হয়। এ আসনে প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৭৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। ফজলে করিমের এ আসনটিতে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ১৬ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার ১০৮টি। বাতিল হয়েছে ১ হাজার ৬৩৭টি।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে নৌকার প্রার্থী ড. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ ছাড়া জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপিসহ ৫ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। এ আসনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে। তথ্যমন্ত্রীর সংসদীয় আসনটিতে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ৩১ হাজার ৯১ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮০টি। ভোট বাতিল হয়েছে ২ হাজার ৯৪৪টি।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-নগর আংশিক) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলাইমান আলম শেঠকে সমর্থন দিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে সরিয়ে দেওয়া হলেও জয়ী হতে পারেননি। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম এবং বিজয় কুমার চৌধুরীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। ভোটের ফলাফলেও এ দুই প্রার্থী ছিলেন এগিয়ে। আসনটিতে শেঠসহ ৮ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এ আসনে মোট ভোটার ছিল ৫ লাখ ১৫ হাজার ৪৭৩ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪২টি। বাতিল হয়েছে ২ হাজার ৩২২টি ভোট।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বাকি ৬ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। এ আসেনে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৯ হাজার ৫৭৬ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৮৭৪টি। যা মোট ভোটের ৩৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। নগরের গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে ভোট বাতিল হয়েছে ২ হাজার ৩১৬টি।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম ছাড়া ৮ প্রার্থী জামানত হারান। আসনটিতে দুই প্রার্থীর মধ্যে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও ভোট পড়েছে মাত্র ২১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এ আসনে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯০ জন। ভোট পড়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১৩৪টি। বাতিল হয়েছে ২ হাজার ৩৮৫টি ভোট।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে এম আবদুল লতিফ ও জিয়াউল হক সুমন ছাড়া বাকি ৫ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এর আসনে ৫ লাখ ১ হাজার ৮৪৮ জন ভোটারের বিপরীতে ভোট পড়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৬২৯। যা মোট ভোটারের ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে ৭ প্রার্থীও হারিয়েছেন তাদের জামানত। আসনটিতে ভোট পড়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৮৮টি। বাতিল হয়েছে ২ হাজার ৮২৮টি। এ আসনে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ২৯ হাজার ৪২৮ জন।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ছাড়া ৬ প্রার্থী জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছেন। এর আসনে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬৪ জন ভোটারের বিপরীতে ভোট পড়েছে ২ লাখ ৩ হাজার ৯২১টি। যা মোট ভোটারের ৫৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে নৌকার প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী ছাড়া ৬ জন জামানত খুয়েছেন। চন্দনাইশের আসনটিতে ভোট পড়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ২৭০টি। বাতিল হয়েছে ২ হাজার ৮৪৪টি। এ সংসদীয় আসনে মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৮৮ হাজার ১২২ জন।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মোতালেব (ঈগল) এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ছাড়া ৫ জন জামানত হারান। এ আসনে ভোট পড়েছে মাত্র ২৮ শতাংশ। ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৪০৩ জন ভোটারের বিপরীতে ভোট পড়ে ১ লাখ ২৯ হাজার ৩৬৩টি। এ আসনে ভোট বাতিল হয় ৩ হাজার ২১১টি।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান এবং আবদুল্লাহ কবির ছাড়া ৭ জন জামানত হারিয়েছেন। এ আসনে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য ভোট গ্রহণের দিন শেষ মুহুর্তে প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। ফলে মোস্তাফিজের পক্ষে পড়া সবগুলো ভোটই বাতিল বলে গণ্য হয়। এতে এ আসনে মোট ভোট বাতিল হয় ৩৬ হাজার ৯৬৮টি। বিভিন্ন নেতিবাচক কারণে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন জুড়ে আলোচনায় থাকা আসনটিতে ভোট পড়ে ১ লাখ ২৯ হাজার ২২৩টি। যা মোট ভোটের ৩৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এ আসনে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৯৫ জন।
১৬ আসনের প্রাপ্ত ফলাফলের তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, মোট ভোটার সংখ্যা ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৯৯৫ জন ভোটারের বিপরীতে মোট ভোট পড়েছে ২৩ লাখ ২৩ হাজার ৮৪১টি। যা মোট ভোটের মাত্র ৩৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। জেলায় ভোট বাতিল হয়েছে ৭৬ হাজার ৮৭০টি।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম ১৬ আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ২ হাজার ২৩টি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরের ৬টি আসনে ছিল ৬৬০টি কেন্দ্র ও উপজেলার ১০টি আসনে ছিল ১ হাজার ৩৬৩টি কেন্দ্র।