ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রপ্তানি দৌড়ে এগিয়েছে পান

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিবেদক :
দেশের সীমানা পেরিয়ে প্রচুর পরিমাণে পান রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। কুষ্টিয়ার অন্য সব উপজেলার মতো দৌলতপুরের পানও যাচ্ছে বিদেশে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারের তুলনায় বেশি দামে পান বিক্রি করায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক। তারা বলছেন, এ অঞ্চলে একটি পান গবেষণা বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা সম্ভব হলে পান চাষকে আরও সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি তৈরি হবে নতুন উদ্যোক্তা। এতে বাড়বে নতুন কর্মসংস্থান, পাশাপাশি বৃদ্ধি পাবে রপ্তানি। সম্ভব হবে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন।

স্থানীয় পান বাজারের হিসাব বলছে, প্রতিদিন দৌলতপুর থেকে ৩-৪ টন পান রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। প্রতি কেজি পান রপ্তানিকারকদের কাছে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেন স্থানীয় ফড়িয়ারা।

ভৌগোলিক ও উপকরণের সহজলভ্যতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের চাষিরা অর্থকরী ফসল হিসেবে পান চাষ করে আসছেন। অন্য ফসল চাষাবাদের পাশাপাশি হাজারখানেক কৃষক পান চাষে জড়িত। কয়েক বছর ধরে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, জর্ডানসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পান।

তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, পান চাষকে আরও সমৃদ্ধ করতে তারা কাজ করছেন। পাশাপাশি সরকারিভাবে এসব পান বাইরে রপ্তানির উদ্যোগও হাতে নিয়েছেন তারা। যা দ্রুত কার্যকর হবে, ফলে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।

দৌলতপুর উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, এই অঞ্চলে স্থানীয় বাজার থেকে বছরে পানের আয় প্রায় ১২ কোটি টাকা। উপজেলাটিতে পান চাষ হয় প্রায় ৪৯০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নে। তবে বিদেশে পান রপ্তানির সঠিক হিসাব নেই এই অফিসে।

পান চাষকে কেন্দ্র করে এই উপজেলায় গড়ে উঠেছে দুটি পান বাজার বা আড়ত। সেখানে চাষিদের কাছ থেকে ফড়িয়ারা পান কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। মাঝে মাঝে অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীরাও এসব বাজার থেকে পান কিনে নিয়ে যান। দেশে ৮০টি পান পাতাকে এক বিড়া বা এক পণ হিসেবে বিক্রি করা হয়। পানক্ষেতকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ‘পান বরজ’। প্রতিদিন ভোরে চাষিরা বরজ থেকে পান ভেঙে বাজারে বিক্রি করে থাকেন।

পান চাষ নিয়ে কথা হয় কয়েক প্রবীণ চাষির সঙ্গে। যারা দুই যুগের বেশি সময় ধরে এই চাষের সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম নজু নামে এক চাষি জানান, বর্তমানে পানের বাজারদর ভালো। স্থানীয় বাজারে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে ১ পণ পান বিক্রি হচ্ছে। আর যে পানটি রপ্তানির জন্য ফড়িয়ারা নিচ্ছেন সেটা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তার এই দীর্ঘ পান চাষকালে পান রপ্তানি শুরুর পর থেকে ভালো লাভের কথা জানান তিনি।

পলাশ নামে এক ফড়িয়া জানান, রপ্তানিযোগ্য পান সরাসরি চাষিদের ‘বরজ’ থেকে সংগ্রহ করা হয়। যেসব চাষি সাপ্লাই পান বিক্রি করতে ইচ্ছুক, তারা ফড়িয়াদের সংবাদ দেন। ফড়িয়ারা ক্ষেতে গিয়ে নিজস্ব লোকজন দিয়ে পান সংগ্রহ করেন।

এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুরুল ইসলাম বলেন, দৌলতপুরে ৪৯০ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হচ্ছে। এতে স্থানীয় বাজার থেকে বছরে অন্তত ১২ কোটি টাকা আয় হচ্ছে। তবে বিদেশে রপ্তানির বিষয়টি আমাদের জানা নেই বলে তিনি জানান।

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, জৈব পদ্ধতিতে নিরাপদ পান উৎপাদনে কৃষি অফিস পানচাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে। এখন কুষ্টিয়া থেকে প্রচুর পান বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। সরকারিভাবে পান বাইরে রপ্তানির উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। যা দ্রুত কার্যকর হবে, ফলে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। এতে কৃষকরাও বেশি লাভবান হবেন বলে তিনি জানান।