ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যটন নগরে চালু হল অনেক প্রত্যাশার রেলপথ

ইয়াসিন কবির জয়, কক্সবাজার থেকে :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ এই রেলপথের উদ্বোধন করেন।এর আগে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা থেকে আকাশপথে রওনা হয়ে ১০টা ৪৫ মিনিটে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে বেলা ১১টায় কক্সবাজারের ঝিলংজায় আইকনিক রেল স্টেশনে আসেন। নবনির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই স্টেশন প্রাঙ্গণে পৌঁছালে শিল্পীদের একটি দল নেচেগেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানায়। এরপর প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান মঞ্চে যান।

 

উদ্বোধনের আগে বর্তমান সরকারের সময়ে রেল যোগাযোগগের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, রেলপথ মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির, রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল হাসান, দোহাজারী কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণকাজের প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন, এশয়ি উন্নয়ন ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন জিন্টিং।

 

অতিথিদের বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি শুভেচ্ছা স্মারক উপহার দেওয়া হয় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এরপর বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “রেলে কক্সবাজার আসা যাবে, অনেকের এই আকাঙ্ক্ষা ছিল। এটা আমাদের ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্প ছিল। আমরা চাই মানুষ উত্তরবঙ্গ, এমনকি পঞ্চগড় থেকে কক্সবাজার ট্রেনে আসতে পারে। সেই ব্যবস্থাও আমাদের করতে হবে। রাজশাহী, খুলনা, সুন্দরবন থেকেও যেন আসতে পারে।“আমরা পদ্মা পাড়ের মানুষ অবহেলিত। এখন পদ্মা সেতু করেছি। পদ্মায় রেলসেতু করেছি। পদ্মার পাড়ের মানুষও আসতে পারবে।”
তিনি বলেন, “এই রেললাইন ঘুমধুম পর্যন্ত যাওয়ার কথা। ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের সাথে সংযুক্ত হতে চাই। সেটা মাথায় রেখেই এই রেললাইন করা হয়েছে।”

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “চকরিয়া থেকে মাতারবাড়ী এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে এই রেলপথ যাতে সংযুক্ত হয়, সে ব্যবস্থা করে দেব। ব্যবসা-বাণিজ্য আরো উন্নত হবে।” পরে প্রধানমন্ত্রী দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ ও কক্সবাজার রেলস্টশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী অতিথিদের নিয়ে স্টেশনের মূল প্ল্যাটফর্মে যান। সেখানে তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হন। তারপর প্রধানমন্ত্রী কাউন্টারে দাঁড়িয়ে টিকেট করে লাল-সবুজ ট্রেনে চড়ে রামুর পথে রওনা হন সরকারপ্রধান। এর আগে তিনি বাঁশি বাজিয়ে ও সবুজ পতাকা নেড়ে নতুন ট্রেনের যাত্রা উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধন আরো ১৯ প্রকল্প

শনিবার কক্সবাজার সফরে রেললাইন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন ও প্রথম টার্মিনালের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন এ তিনটিসহ মোট ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে আছে- কক্সবাজার বিমান বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাঁকখালী নদীর উপর সেতু ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ, ২১২ একর ভূমি ভরাট, ৪ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার স্লোপ প্রটেকশন বাঁধ নির্মাণ, সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ডিজাইন ও স্থাপনাকরণ প্রকল্প এবং গোরকঘাটা-শাপলাপুর সড়ক প্রসস্তকরণ। পাশাপাশি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়া দ্বীপকে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তকরণ প্রকল্পও উদ্বোধন করবেন তিনি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে কক্সবাজারের রামু উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) নির্মাণ প্রকল্পটিও আছে উদ্বোধনের তালিকায়।

 

এছাড়া কৈয়ারবিল থেকে চৌকিদারপাড়া পর্যন্ত সিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, বীর মুক্তিযোদ্ধা পৌর বাস টার্মিনাল সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজ এবং জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ইউনুছখালী নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, রত্না পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এবং মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হবে। টেকনাফ উপজেলার মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার রিসিলেন্ট শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার, রামুর জোয়ারিনালা ইউনিয়নের মহসীনা বাজার ভায়া নন্দখালী সড়কে আর্চ ও আরসিসি গার্ডার ব্রিজ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ভবন নির্মাণ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

 

শনিবার বেলা ৩টায় তিনি মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে পৌঁছাবেন। সেখানে গভীর সমুদ্র বন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন এবং গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।এরপর বিকালে মাতারবাড়ী টাউনশিপ মাঠে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেবেন। জনসভা শেষে সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।