ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নিধনের ফল ‘ভয়ানক’ এই যুদ্ধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

 

ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের বামপন্থী জোট হাদাশের সদস্য ওফার ক্যাসিফ ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ড অবৈধভাবে দখল অব্যাহত রাখলে তার পরিণাম শনিবারের হামলার মতো ভয়াবহ হতে পারে ইসরায়েলের সরকারকে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন ইসরায়েলি একজন আইনপ্রণেতা। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তারপরও তার দখলদারিত্বের নীতিতে পরিবর্তন আনেননি বলে জানিয়েছেন তিনি।

 

রোববার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের বামপন্থী জোট হাদাশের সদস্য ওফার ক্যাসিফ।

 

শনিবার স্থানীয় সময় ভোরের দিকে ইসরায়েলে হাজার হাজার রকেট নিক্ষেপ শুরু করে হামাস। গাজাভিত্তিক সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর যোদ্ধারা ইসরায়েলি বিভিন্ন শহর ও অবৈধ বসতিতে অনুপ্রবেশ করে বহুমুখী হামলা চালায়।

 

এই হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর কয়েক ডজন সৈন্যও রয়েছেন। হামাসের হামলায় ইসরায়েলিদের অসংখ্য মরদেহ রাস্তায় পড়ে আছে। আর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় কমপক্ষে ৩৭০ ফিলিস্তিনি নিহত ও এক হাজার ৭০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

 

বামপন্থী জোট হাদাশের সদস্য ওফার ক্যাসিফ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ইসরায়েলি সরকার যদি ফিলিস্তিনিদের প্রতি নীতিতে পরিবর্তন না আনে, তাহলে পরিস্থিতির বিস্ফোরণ ঘটবে বলে তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন। ইসরায়েলের ১২০ সদস্যের পার্লামেন্ট নেসেটে হাদাশের চারটি আসন রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর যেকোনও ধরনের হামলার নিন্দা ও বিরোধিতা করি। ইসরায়েলি সরকারের বিপরীতে এর অর্থ হলো আমরা ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর যেকোনও হামলারও বিরোধিতা করি। আমাদের অবশ্যই সেই ভয়ানক ঘটনা (আক্রমণ) এবং চলমান দখলদারিত্বের বিষয়গুলো নিয়ে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে।

 

ওফার ক্যাসিফ বলেন, ‘আমরা বারবার সতর্ক করে দিয়েছি… সবকিছুর বিস্ফোরণ ঘটতে চলেছে এবং প্রত্যেককেই মূল্য দিতে হবে— প্রধানত উভয়পক্ষের নিরীহ নাগরিকদের। এবং দুর্ভাগ্যবশত, ঠিক তাই ঘটেছে।’

 

তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল সরকার একটি ফ্যাসিবাদী সরকার। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূল অভিযানকে সমর্থন, উৎসাহ এবং নেতৃত্ব দেয়। সেখানে জাতিগত নিধন চলছে। ফিলিস্তিনিদের রক্তে এটা স্পষ্টতই দেওয়ালে লেখা আছে। দুর্ভাগ্যবশত এখন ইসরায়েলিরাও একই পরিণতি ভোগ করছে।’

 

ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, ২০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি গাজার সীমান্ত অঞ্চল ছেড়ে জাতিসংঘের স্কুলগুলোতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য হামাস-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের আরও ভেতরে চলে গেছে।

 

এর আগেও ইসরায়েল ও হামাসের সংঘর্ষে গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং ইসরায়েলি শহরগুলোতে কয়েকদিন ধরে রকেট হামলা হয়েছিল। তবে গাজা উপত্যকার এবারের পরিস্থিতি অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় ভিন্ন। কারণ ইসরায়েলের ডানপন্থী সরকার নজিরবিহীন হামলার মুখোমুখি হয়েছে। এই হামলা মোকাবিলায় রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে ইসরায়েল।

 

অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিরা পশ্চিম তীরে চলমান দখলদারিত্ব ও গাজায় শ্বাসরুদ্ধকর অবরোধের কারণে হতাশায় নিমজ্জিত রয়েছেন। তারা এই দশা থেকে মুক্তির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। হামাসের নেতারা বলেছেন, তাদের এবারের সংঘাতের উদ্দেশ্য ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪