সিএনএন বাংলা ডেস্ক:
চোখ ধাঁধানো এক গোলে ইন্টার মিয়ামি ক্যারিয়ার শুরু করেছেন লিওনেল মেসি, সঙ্গে তার নতুন ক্লাব ছয় ম্যাচ পর জয়ের মুখ দেখেছে। কিন্তু সব ছাপিয়ে একটি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, ইউরোপীয়ান ফুটবলের জৌলুস কিংবা সৌদি আরবের লোভনীয় প্রস্তাবকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মত লো-প্রোফাইলের একটি লিগে খেলতে এসে মেসি কতটা খুশি।
পিএসজির দুই বছরের ক্যারিয়ারে আর্জেন্টাইন এই সুপারস্টার যে মোটেই সন্তুষ্ট ছিলেন না তা বোঝাই গেছে। এমনকি পিএসজির শেষ ম্যাচে তাকে সমর্থকদের দুয়োধ্বনিও শুনতে হয়েছে। কিন্তু মেসির এই আগমনে মেজর লিগ সকার এবং সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল যে লাভবান হবে তা সহজেই অনুমেয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের লিগে মেসির এই খেলতে আসা বিশ্বজুড়ে কতটা আলোচিত-সমালোচিত হয় তা সময়ই বলে দিবে।
ডিসেম্বরে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ শিরোপা উপহার দেওয়ার পর ৩৬ বছর বয়সী মেসি কার্যত তার ক্যারিয়ারের শেষটা দেখে ফেলেছেন। সে কারণেই মেসির এই মিয়ামিতে আগমন অনেকটাই চাপ সামলে ক্যারিয়ারের শেষ সময়টা কিছুটা আনন্দের সঙ্গে কাটানোই লক্ষ্য। মেসি নিজেও সেটা স্বীকার করেছেন। পরিবার নিয়ে প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের এই শহরে ছুটি কাটাতে আসা মেসির কাছে পরিবেশটাও বেশ পরিচিত।
দক্ষিণ ফ্লোরিডায় আসার পর থেকেই মেসির মুখে প্রতিনিয়ত হাসি দেখা গেছে, যা সচরাচর সতীর্থরা দেখতে পায়না। তাকে দেখে খুশি মনে হয়েছে এবং তার হাসিমুখই সবকিছু বলে দিচ্ছে। যে কারনে তার আশেপাশের সবাইও বেশ আনন্দেই আছেন।
লিগ কাপে মেক্সিকোর ক্রুস আজুলের বিরুদ্ধে ২-১ গোলের জয়ে ৯৪ মিনিটে ট্রেডমার্ক ফ্রি-কিকের গোলে মেসি মিয়ামিকে জয় উপহার দিয়েছেন। ম্যাচ শেষে মেসি বলেছেন, ‘আমরা সবাই জানতাম জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সৌভাগ্যবশত: আমরা সেটা করতে পেরেছি এবং আমি সত্যিই দারুন খুশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আসতে পেরে আমি এবং আমার পরিবার দারুন খুশি। এই ক্লাবকে বেছে নেওয়ায় আমরা সবাই স্বস্তিতে আছি। আরো একবার এখানকার সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আশা করছি এভাবে সবাই মিলে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারবো।’
মেসি একজন সুপারস্টার। কিন্তু তিনি সবসময়ই নিজেকে একজন সেলিব্রেটি হিসেবে উপস্থিত করতে দ্বিধা বোধ করেছেন। মেসি আসার আগে এমএলএস’র সবচেয়ে বড় নাম ছিল ডেভিড বেকহ্যাম। ইংলিশ ফুটবলে রাজত্ব করা এই সাবেক অধিনায়ককে পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল যেন নতুন যাত্রা শুরু করেছিল। এমনকি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মত চির প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময় খেলার পরও মেসি যেন ছিলেন এক ভিন্ন জগতের মানুষ। বেকহ্যাম কিংবা রোনালদোর মত মেসি কখনই তার খ্যাতি নিয়ে স্বস্তি বোধ করতে চাননি। ১৭ বছর বার্সেলোনার ক্যাম্প ন্যুতে যে স্টেডিয়ামে খেলেছেন মেসি, তার তুলনায় চারগুন ছোট স্টেডিয়ামে মাত্র ২০ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন মিয়ামির অস্থায়ী স্টেডিয়ামে কাল খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু স্টেডিয়ামে চারপাশে স্প্যানিশ ভাষার সমর্থকদের দেখে মেসি সময়টা বেশ উপভোগ করেছেন। এমনকি আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দিয়েও অনেকে স্টেডিয়ামে এসেছিলেন।
ম্যাচের ৫৪ মিনিটে মিয়ামির ১৮ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার বেঞ্জামিন ক্রেমাশির স্থানে খেলতে নামেন মেসি। এমএলএস’এ ১১ ম্যাচে জয়বিহীন দলটির ড্রেসিংরুমের চেহারা এক জয়েই পাল্টে গেছে বলে ক্রেমাশি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি পুরো দলের চিত্রই পরিবর্তন হয়ে গেছে। সবাই বেশ স্বস্তিতে আছে। মেসিকে কাছে পেয়ে আমরা সবাই দারুন খুশি। মালিকপক্ষ এবং স্টাফরাও রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। আর এতেই পরের ম্যাচেও জয় সম্ভব।’
মেসি যাতে সহজেই নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে সেজন্য সব ধরনের চেষ্টাই করেছে মিয়ামি। চারপাশে সতীর্থরা সব স্প্যানিশ ভাষাভাষীর, কোচ হিসেবে পেয়েছেন বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার সাবেক বস জেরার্ডো মার্টিনোকে। এমনকি ক্লাব স্টাফরাও তার সাথে স্প্যানিশ ভাষা ও সংস্কৃতি ভাগাভাগি করতে পারছে।
অনুশীলনে মেসিকে সতীর্থদের সঙ্গে বেশ হাসি-ঠাট্টা করতে দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি আনন্দের খবর বার্সার সাবেক সতীর্থ ৩৫ বছর বয়সী সার্জিও বুসকেটসকে আবারো দলে ফিরে পেয়েছেন মেসি। কাল এই দুজন যখন বদলী বেঞ্চ থেকে একসাথে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামেন তখনই দলের চেহারা পাল্টে যায়।
আগামী বছর যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে কোপা আমেরিকা অনুষ্ঠিত হবে সে কারণেই আর্জেন্টিনার হয়ে শিরোপা ধরে রাখাও মেসির একটি লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নুর মোহাম্মদ, সিএনএন বাংলা২৪