ই-পেপার | রবিবার , ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ময়মনসিংহের অর্থনীতির চাকা খুলতে, বন্ধ থাকা রেলষ্টেশন চালুর দাবী জানিয়েছেন

 মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ময়মনসিংহ:

বহু বছর ধরে বন্ধ ময়মনসিংহের তিন রুটের ১০টি রেলস্টেশন। প্রান্তিক অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব ছাড়াও যাতায়াতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ। এ অবস্থায় এখানকার অর্থনীতির চাকা ভালোভাবে সচল করতে রেলস্টেশনগুলো চালুর দাবি জেলা চেম্বার অব কমার্সের। যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সুবিধায় ঘুরে দাঁড়াতে পারে ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রান্তিক পর্যায়ের অর্থনীতি।

 

স্টেশনগুলোতে ট্রেন না থামায় সাধারণ জনগণকে সড়কপথে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে স্থানীয় কৃষি, শিক্ষা ও অর্থনীতিসহ বিভিন্ন খাতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

 

সরেজমিনে বন্ধ থাকা স্টেশনগুলো ঘুরে দেখা যায়, কোনো ধরনের কার্যক্রম না থাকায় রেলের অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় সেগুলো মাদকসেবীদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে। এছাড়াও নিয়মিত কার্যক্রম না থাকায় অন্যান্য ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রেও দূরবর্তী স্টেশনগুলোতে ক্রসিংয়ে বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে।

 

ফলে শিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সিঙ্গেল লাইনে একটি ট্রেন বন্ধ স্টেশনগুলো পার হয়ে পরের সচল স্টেশন অতিক্রম না করা পর্যন্ত বিপরীত দিকে থেকে কোনো ট্রেন আসার সুযোগ নেই। ফলে প্রতিটি ট্রেনকেই শত শত যাত্রীসহ দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।

 

তবে বন্ধ স্টেশনগুলোকে সচল করা গেলে ক্রসিংয়ের সময় অর্ধেক কমিয়ে আনা সম্ভব। এতে যাত্রীদের ভোগান্তিও লাঘব হবে। বন্ধ স্টেশনগুলোকে দ্রুত চালু করার দাবি জানিয়ে জেলা চেম্বার অব কমার্স বলছে, এতে অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটানো সম্ভব হবে। সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি শঙ্কর সাহা সাংবাদিকদের বলেন, ট্রেন যোগাযোগ অনেক নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী।

 

যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের সুবিধা কাজে লাগানো গেলে প্রান্তিক পর্যায়ের অর্থনীতির চাকা সচল করা যাবে। এতে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষ যেমন উপকৃত হবে, তেমনি সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিও উপকৃত হবে। রেলওয়ে সূত্র মতে, ময়মনসিংহ জেলায় ২৪টি রেলস্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন ৪৬টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে।

অথচ নেটওয়ার্কের আওতায় থাকা সত্ত্বেও ১০টি স্টেশন বন্ধ থাকার কারণে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী সুবিধাবঞ্চিত। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এ অঞ্চলের অর্থনীতি ও স্থানীয়দের জীবনমানে। এজন্য অবিলম্বে বন্ধ থাকা স্টেশনগুলো সচল করার দাবি তাদের।

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, বন্ধ স্টেশনগুলোতে কোনো কার্যক্রম না থাকায় সিগন্যালিং ও টেলিকমের অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র অকেজো হয়ে পড়ছে। অবহেলায় পড়ে থাকা রেলের বহু দামি যন্ত্রাংশ চুরিও হয়ে গেছে। ক্ষতি হচ্ছে বিভিন্ন ভবন ও অবকাঠামোর।

ময়মনসিংহ সদরের সুতিয়াখালি এলাকার বাসিন্দা মজিবর রহমান জানান,পার্শ্ববর্তী উমেদনগর স্টেশনটি দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় এখানে কোনো ট্রেন থামে না। তাই স্টেশনে কেউ যাওয়া-আসা করে না।

 

এ সুযোগে বন্ধ এসব স্টেশনে জুয়া ও মাদকের আসর বসে। ভবনের কাচ ভেঙে বেশকিছু যন্ত্রাংশ চুরি করেও নিয়ে গেছে মাদকসেবীরা। যেগুলো অবশিষ্ট আছে সেগুলোও অরক্ষিত পড়ে আছে। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে মাদকসেবীরা তাকে হেনস্তা করে।

 

বেশ কয়েকবার পুলিশ অভিযান চালালেও কোনো লাভ হয়নি। বেগুনবাড়ি বাজার এলাকার ষাটোর্ধ্ব রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই স্টেশন (বাইগনবাড়ি) দিয়ে আগে যাত্রীর পাশাপাশি পাট ও ধানসহ অন্যান্য কৃষিজ পণ্য পরিবহন হতো। স্বল্প খরচে পণ্য পরিবহন করতে পারায় স্থানীয় কৃষকরাও লাভবান হতেন। শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবীরা অপেক্ষাকৃত কম খরচে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে পারতেন।

 

কিন্তু স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সড়কপথে অতিরিক্ত অর্থ এবং সময় ব্যয় করে তাদের চলাচল করতে হচ্ছে। বিসকা স্টেশন এলাকায় তপন কান্তি দে এবং রিপন সরকার জানান, স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খোয়া যাচ্ছে। ভবনগুলোর অবস্থাও নাজুক হয়ে পড়েছে। মটর এবং তার চুরি হয়ে যাওয়ায় সিগনালের লাইটগুলোও এখন জ্বলে না।

 

একাধিকবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে দাবি জানিয়ে, গণস্বাক্ষর এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেও কোনো লাভ হয়নি। স্টেশনগুলো চালুর বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় হতাশা ব্যক্ত করেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ এবং জামালপুর রুটের উমেদনগর, বাইগনবাড়ি, বিসকা, সোহাগী, মুসল্লি স্টেশনসহ ১০টি রেলস্টেশন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।

 

এর মধ্যে সোহাগী স্টেশন গেল বছর বন্ধ হলেও বাইগনবাড়ি ও বিসকা স্টেশন ৭ বছর, মুসল্লি স্টেশন ৮ বছর এবং উমেদনগর স্টেশন প্রায় ২২ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, আহাম্মদবাড়ি, মশিউর নগর, নিমতলা এবং বোকাইনগর স্টেশনগুলো গত প্রায় ২০ থেকে ২২ বছর বন্ধ রয়েছে।

 

এইচ এম কাদের সিএনএন বাংলা২৪: