বার্তা পরিবেশক:
দেশের নাগরিকদের ডিজিটাল মাধ্যমে এবং ডিজিটাল সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের তথাকথিত অজুহাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ তৈরী করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছর যাবৎ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কোনো ধরণের নিরাপত্তা বিধান করছে না। বরং এই আইনের মাধ্যমে বিরুদ্ধ মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে খর্ব করা হচ্ছে। এই আইন হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের লুটপাট, পাচার ও জুলুমের নিরাপত্তার বর্ম। রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ নারী-পুরুষ, এমনকি শিশুরাও এই আইনে আক্রান্ত হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশের সকল মানুষকে অনিরাপদ করে তুলেছে এবং সকল নাগরিকের মাঝে ভয়ের সংস্কৃতি জোরদার করেছে।
ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক প্রেস কনফারেন্সে একথা বলেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভুক্তভোগীদের সংগঠন ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্ক।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সদস্য সচিব প্রীতম দাশের পঠিত এক লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৭০০১টি মামলা করা হয়েছে। ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্ক সর্বশেষ ১৩৩১টি মামলার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে দেখেছে এই মামলা গুলোতে ৪১৬৯ জনকে আসামী করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ মামলা হয়েছে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে ৪৩১টি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৩৬৮টি এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ১৩৪টি। এ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, সমাজকর্মী এমনকি ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দমন পীড়নের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
এই আইন দ্বারা সাংবাদিক, নারী ও শিক্ষার্থীদেরও নাজেহাল ও গ্রেফতার করা হয়েছে। র্যাবের হেফাজতে মারা যাওয়া সুলতানা জেসমিনের ওপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছিল। এ আইনে দীর্ঘ ১০মাস বিনা বিচারে আটক থাকা অবস্থায় জেলে মারা গেছেন লেখক মুশতাক আহমেদ। সংবাদপত্রে মাছ, মাংস ও চালের স্বাধীনতা বিষয়ক প্রতিবেদন করার কারণে সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে ডিএসএ মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল।
এই আইনে দীর্ঘ ১০ মাস ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা কারাগারে আটক রয়েছেন। উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী মোঃ ইছমাইল, মো: তরিকুল ইসলামসহ অসংখ্য মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের শিকার হয়ে কারাগারে আটক রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবী করা হয়, এই গণবিরোধী দমন পীড়নের আইনটিকে সংশোধন নয়, পুরোপুরি বাতিল করতে হবে। যেকোনো মাত্রায় এই আইন বিরাজমান থাকলে তা বাংলাদেশের নাগরিকদের নূন্যতম মত প্রকাশের অধিকারকে মারাত্মক হুমকিতে রাখবে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে ঈদের আগেই খাদিজা, ইছমাইল, তারিকুলসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী সকলের নি:শর্ত মুক্তির দাবী জানানো হয়। একইসাথে ঘোষণা করা অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সহ সকল নিপীড়নমূলক আইন বাতিল করতে হবে, সকল ক্ষতিগ্রস্থদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, মিথ্যা মামলাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে, এবং সরকারের এমন নিপীড়নমূলক আইন বানানোর একচ্ছত্রে ক্ষমতার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
গণমানুষের স্বার্থে ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্কের এই সকল দাবী মানা না হলে, অবিলম্বে সারাদেশে এই আইনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত সকলকে নিয়ে বৃহত্তর কর্মসূচীর ডাক দেয়া হবে কনফারেন্সে ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের উপর ঘটে যাওয়া নিপীড়নের বিবরণ দেন, সোনিয়া আক্তার স্মৃতি, ইসরাত জাহান রেইলী, ওয়াসিম ইফতেখারুল হক, এন ইউ আহমেদ, শেখ রিয়াদ মো: নুর, দিদারুল ভূঁইয়া ও প্রীতম দাশ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মিথ্যা মামলায় ১০ মাস ধরে জেলে আটক খাদিজাতুল কোবরার বোন সিরাজুম মুনিরাও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া মোহাম্মদ উল্লাহ মধু, সাধনা মহল, ইমরান ইমন সহ অনেক রাজনৈতিক ও অধিকার কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনের আহবায়ক গোলাম মাহফুজ জোয়ার্দার এর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন দিদারুল ভূঁইয়া।
এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪