ই-পেপার | রবিবার , ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চার ‘এম’ নিয়ে যত চ্যালেঞ্জ শুরু দিল্লিবাড়ির লড়াই সঙ্গে দলবদলের খেলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভারতে লোকসভা ভোটের দামামা বেজে গেল। দিল্লিবাড়ির অধিকর্তা কে হবে তা নিয়ে শুরু হলো লড়াই। শনিবার তপশিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনি আচরণবিধির প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে।

 

লোকসভা ভোটের সঙ্গে কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটও হবে, হবে কয়েকটি উপনির্বাচনও। নির্বাচন হবে রাজ্যভিত্তিক এক দফা সাত দফা ভিত্তিক। অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গে ভোটটা অনেকটাই আলোচিত হয়। কারণ সেখানে তারকা প্রার্থীর ছড়াছড়ি। ইতিমধ্যে ভোটের প্রচারও শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে শুরু হয়েছে দলবদলের খেলা। ৯৭ কোটি ভোটারের দেশে নির্বাচনটা সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে চ্যালেঞ্জও কম নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সব চ্যালেঞ্জের অবসান ঘটবে ৪ জুন ফল ঘোষণার মাধ্যমে। জানা যাবে, দিল্লিবাড়িতে উঠবে কোন দলের প্রধানমন্ত্রী।

একনজরে ভোট

ভোটের তপশিল ঘোষণার পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উত্সবের সূচনা হয়ে গেল। সত্যিই তাই। বিশ্বে এতো ভোটার আর কোনো দেশে নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব জানিয়েছেন, মোট সাত দফায় নির্বাচন হবে। প্রথম দফার ভোট হবে ১৯ এপ্রিল। দ্বিতীয় দফার ভোট হবে ২৬ এপ্রিল। তৃতীয় দফার ভোট হবে ৭ মে। চতুর্থ দফার ভোট হবে ১৩ মে। পঞ্চম দফার ভোট হবে ২০ মে। ষষ্ঠ দফার ভোট হবে ২৫ মে। সপ্তম দফার ভোট হবে ১ জুন। ৪ জুন ভোটগণনা ও ফলাফল। ১৮তম লোকসভা ভোট শুরু হবে আগামী ১৯ এপ্রিল এবং শেষ হবে ১ জুন। ভারতে মোট ৫৪৩টি লোকসভা আসনে এ নির্বাচনের পাশাপাশি বিধানসভা নির্বাচন হবে চার রাজ্যে। একই সঙ্গে বিধানসভা উপনির্বাচন হবে ১৩টি রাজ্যে। নারী ভোটারের সংখ্যা ৪৭ কোটি ১০ লাখ ও পুরুষ ভোটার ৪৯ কোটি ৭০ লাখ। নির্বাচনে ব্যবহার হচ্ছে ৫৫ লাখ ইভিএম। ১০ লাখ ৫০ হাজার ভোটকেন্দ্র, দেড় কোটি পোলিং অফিসার। প্রথম বার ভোট দেবেন ১ কোটি ৮০ লাখ। ১০০ বছরের বেশি বয়সের ভোটারের সংখ্যা দুই লাখ ১৮ হাজার। ৮৫ বছরের ঊর্ধ্বে ভোটারের সংখ্যা ৮২ লাখ। তৃতীয় লিঙ্গ ভোটারের সংখ্যা ৪৮ হাজার।

আছে যত চ্যালেঞ্জ

সহিংসতামুক্ত ভোট করানোর ব্যাপারে বদ্ধপরিকর থাকার কথা জানিয়েও জাতীয় নির্বাচন কমিশন মেনে নিয়েছে যে, তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ ‘ফোর এম’ অর্থাত্ চারটি ‘ম’। তবে সেগুলোর মোকাবিলা করার বিষয়েও গুচ্ছ পরিকল্পনার কথা জানান দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। এই চারটি ‘এম’ কী কী? রাজীব জানিয়েছেন, মাসল (পেশিশক্তি), মানি (অর্থশক্তি), মিস ইনফরমেশন (ভুয়া তথ্য) এবং মডেল কোড অব কনডাক্ট (আদর্শ নির্বাচনি আচরণবিধি)। রাজীব জানিয়েছেন, ভোটে অর্থের লেনদেন রুখতেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যেমন, কোনো নেতা বা নেত্রী যদি কোথাও চার্টার্ড বিমান বা চপার নিয়ে প্রচারে যান, প্রয়োজনে পুলিশ বা বাহিনী সেখানেও তল্লাশি চালাতে পারে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকাগুলোতে নজরদারির জন্য ‘ড্রোন’ উড়বে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, ‘আমাদের সময়ে কমিশনের কাজকে অনেক গুছিয়ে করার চেষ্টা করেছি। যে কারণে এই সময়ে আদালতও কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিশেষ কোনো মন্তব্য করেনি। তার দাবি, গত দুই বছরে যে যে রাজ্যে ভোট হয়েছে, সেখানে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৪০০ কোটি রুপি নগদ উদ্ধার করেছে কমিশন।

 

দলবদলের খেলা

ভারতে জাতীয় দলসমূহের মধ্যে রয়েছে—সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস, সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, ভারতীয় জনতা পার্টি কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া, কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী), বহুজন সমাজ পার্টি, ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি। এছাড়া অর্ধশতের বেশি আঞ্চলিক দল রয়েছে। এসব দলও নির্বাচনে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

ভোটের দামামা বাজার সঙ্গে সঙ্গে দলবদলের খেলাও শুরু হয়ে যায়। চলতি মাসেই বিজেপির দুই লোকসভা এমপি হরিয়ানার হিসারের ব্রিজেন্দ্র সিংহ এবং রাজস্থানের চুরুর রাহুল কসওঁয়া কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। শুক্রবার তেলেঙ্গানার মেহবুবনগরের সাবেক বিজেপি এমপি জিতেন্দ্র রেড্ডিও দল ছেড়েছেন। ১৯৯৯ সালে বিজেপির টিকিটে অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের মেহবুবনগরের এমপি হয়েছিলেন জিতেন্দ্র। রাজ্য ভাগের পরে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটেও জিতেছিলেন। পরবর্তী সময়ে যোগ দিয়েছিলেন তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের (কেসিআর) দল ‘তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি’ বা টিআরএসে (বর্তমানে যা ‘ভারত রাষ্ট্র সমিতি’ বা বিআরএস)। কিন্তু আবার বিজেপিতে ফিরে আসেন। এরই মধ্যে শনিবার বিজেপিতে যোগদান করেন গায়িকা অনুরাধা পোড়ওয়াল। অনুরাধার যোগদানের কিছুক্ষণ আগেই বিজেপি ছাড়ার কথা ঘোষণা দেন অজয়প্রতাপ সিংহ। তিনি মধ্যপ্রদেশ থেকে বিজেপির রাজ্যসভার এমপি। সামনে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে ততই দলবদলের খেলা বাড়বে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।