আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পাকিস্তান সংবাদমাধ্যম ডনের নির্বাচনি ফলাফলে একটি গ্রাফিক্স প্রকাশ পেয়েছে। দেখা যায়, নির্বাচনি মাঠে মূল প্রার্থীরা দৌড়ের ওপর আছেন। শনিবার রাত পর্যন্ত কারো দৌড় শেষ হয়নি। যেহেতু পুরো ফলাফল ঘোষণা হয়নি। এই দৌড়ে শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হবেন কিংবা দৌড়ে জিতেও পুরস্কার নিজের কাছে রাখতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। নির্বাচনের ১০ ঘণ্টা পর ফলাফল ঘোষণা করা হয় এবং ৬০ ঘণ্টা পরও পূর্ণাঙ্গ ফল আসেনি।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হয়ে অনাস্থা ভোটে বিদেশি সহায়তায় ক্ষমতাচ্যুত করা, দুর্নীতির মামলায় জেলে ঢোকানো, পরে সেই মামলার রায় স্থগিত। এরপর রাষ্ট্রীয় গোপন নথির মামলাসহ এক ডজনের বেশি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ইমরান খানকে এখনো কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। তার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, গুম, দল ছাড়তে বাধ্য করাসহ এমন কোনো নীপিড়নমূলক কাজ নেই যা ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সঙ্গে করা হয়নি। কিন্তু এক্ষেত্রে বিদেশিরা চুপ ছিল বলেই বলা যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনতার রায় ক্ষমতার হাতে বন্দি ইমরান খানের পক্ষেই গেছে। তার সমর্থিত প্রায় শত স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। বাকি দলগুলো এর চেয়ে কম আসন পেয়েছে। কিন্তু তারপরও তিনি শেষ পর্যন্ত সরকার গঠন করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ দেশটিতে সবার মাথার ওপর রয়েছে সামরিক বাহিনী।
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ২৬৫ আসনে ভোট হয়েছে (একটি স্থগিত)। তিনটিতে পুনরায় ভোট হবে। শনিবার রাত পর্যন্ত পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) ঘোষিত ২৫৭ আসনের মধ্যে ১০২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন যাদের প্রায় সবাই পিটিআই সমর্থিত। দ্বিতীয় স্থানে থাকা পিএমএলএন ৭৩ এবং তৃতীয় স্থানে থাকা পিপিপি ৫৪ আসনে জয়ী হয়েছে। অন্যরা পেয়েছে ৩৬ আসন। সরকার গঠনে পাকিস্তানের ম্যাজিক ফিগার হল ১৩৪।
৭০টি আসন মহিলা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত। এর মধ্যে মহিলাদের জন্য ৬০ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ১০টি আসন। পাকিস্তান সংবিধান অনুযায়ী সরাসরি ভোটে যে দল যে সংখ্যক আসনে জয় পাবে, সেই অনুপাতে ঐ সংরক্ষিত আসনগুলোতে প্রতিনিধি ঠিক করে দলগুলো। যদিও এই সংরক্ষিত আসনগুলোর ওপর সরকার গঠন নির্ভর করে না। এই আবহে কী বলছেন পাকিস্তানি সেনার প্রধান জেনারেল মুনির?
পাকিস্তানের নির্বাচনের ফল সামনে আসতেই দেশবাসীকে নির্বাচনের সাফল্যের জন্য স্বাগত জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানকে কট্টরপন্থা এবং বিশৃঙ্খলার রাজনীতি থেকে সরে আসতে হবে।’ উল্লেখ্য, পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনার প্রভাব সর্বজনবিদিত। বলা হয়, গতবার ইমরানের জয়ের নেপথ্যে ছিল সেনাবাহিনীর হাত। তবে মাঝপথে আইএসআই প্রধান নিয়োগসহ একাধিক বিষয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইমরানের মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল। এরপরেই গদি খোয়াতে হয়েছিল ইমরানকে। ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের রাজনীতির রেফারি, আম্পায়ার, বিচারক সবই যেন সামরিক বাহিনী! এরপরে একাধিক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ইমরান। পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে ১০ বছরের জন্য তাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর এবার পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ‘হাত’ নওয়াজ শরিফের মাথার ওপরে ছিল বলে মনে করা হচ্ছিল। তবে নির্বাচনে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরাই সবচেয়ে এগিয়ে গিয়েছেন। তবে সেনা প্রধানের ‘স্থিতিশীলতার’ বার্তা বেশ তাত্পর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
পিএমএল-এন-পিপিপি সরকার চায় সেনা
পাকিস্তানের গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়েও নওয়াজ শরিফ শুক্রবার রাতেই সরকার গঠন করবেন বলে জানান। জানা গেছে, শুক্রবারই পাকিস্তানের পরবর্তী সরকার গঠনের জন্য পিপিপির বিলাওয়াল ভুট্টো এবং তার বাবা আসিফ আলি খান জরদারির সঙ্গে কথা বলেছেন নওয়াজের ভাই তথা পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। উল্লেখ্য, এর আগে ইমরান খানকে গদিচ্যুত করার পরে যে সরকার গঠিত হয়েছিল, তার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শাহবাজ। আর সেই সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন বিলাওয়াল ভুট্টো। এই আবহে দেশকে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ভাবে স্থিতিশীলতা দিতে ফের দুই দল হাত মেলাতে চলেছে বলে জানা যাচ্ছে। এদিকে শুধু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার নয়, পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সরকারও জোট বেঁধে গঠন করবে এই দুই দল। এদিকে খাতায় কলমে পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা আদতে নির্দলীয়।
এই পরিস্থিতিতে নওয়াজ ও বিলাওয়ালের দলের সম্মিলিত সংখ্যা ১৩৪ পার না করলেও নির্দলীদের নিয়ে তারা সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদি তাই হয়, তাহলে ইমরান খেলার মাঠে জয় পেলেও সেঞ্চুরি করেও রাজনীতির মাঠ থেকে আউট হতে হবে ইমরান খানকে। আর জেলেই হয়তো বা তার জীবনের অনেকগুলো বছর কাটাতে হবে। এর মাধ্যমেই রাজনীতির কূটকৌশলের কাছে হারতে হবে জনগণের প্রিয় নেতা ইমরান খানকে। এর ফলে হয়তো পাকিস্তানকে নতুন রাজনৈতিক সংকটে পড়তে হবে। আর ইমরান খান সরকার গঠন করলে তো বিদেশ ফেরত নওয়াজ শরিফের ভাগ্যের ঠিকানা জেলও হতে পারে।