নিজস্ব প্রতিবেদক , ঢাকা :
নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে প্রয়াত এইচটি ইমামের স্থলাভিষিক্ত কে হবেন, সে সিদ্ধান্ত হয়নি। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হিসেবে তার পক্ষে কো-চেয়ারম্যান নির্বাচন পরিচালনা করেন। যে কারণে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এই কো-চেয়ারম্যান পদটি।
কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, কো-চেয়ারকে ঘিরেই নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কো-চেয়ারের দায়িত্ব হলো দলের সভাপতির সঙ্গে কর্মীদের সমন্বয় করা। নির্বাচন কমিশন ও মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং দলের প্রার্থীরা যেন কোথাও বাধাগ্রস্ত না হতে পারে তা নিশ্চিত করা। নির্বাচনের কৌশল, নির্বাচনী ইশতেহারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারের মাধ্যমে। যেহেতু কো-চেয়ার নিজে নির্বাচন করেন না তাই তিনি অফিসে বসে দেশের সার্বিক নির্বাচনী কার্যক্রম দেখভাল করেন। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয়ের ক্ষেত্রেও তাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হয়।দলের সভাপতি সেটি বিবেচনায় নিয়েই এ পদে কাউকে বসাবেন। সেই ঘোষণাটিও দু-একদিনের মধ্যেই আসবে বলে জানান তারা।
এ পদে অনেকের নাম আলোচনায় থাকলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, গত কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার ওপর ন্যস্ত করেছেন তারা। কারণ তাদের বিশ্বাস অভিজ্ঞ, বর্ষীয়ান, চৌকস কোনো ব্যক্তিকেই এ দায়িত্ব দেওয়া হবে। এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ের মতো এবার প্রচার, দপ্তর, অর্থ, আইনসহ ১৪টি উপ-কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কমিটিগুলোতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত নেতাদের।
গত ৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় গণভবনে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঘোষিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির চেয়ারম্যান দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা আর সদস্য সচিব দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ার হিসেবে কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। তবে, দলের উপদেষ্টা পরিষদ, কার্যনির্বাহী কমিটি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা এ কমিটির সদস্য।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, অনেকের নাম শোনা গেলেও সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিই এ পদে আসবেন, এটি প্রত্যাশা করি।তিনি বলেন, ‘নির্বাচন পরিচালনা কমিটি দলের গঠনতান্ত্রিক ব্যাপার। সে অনুযায়ী সভাপতি চেয়ারম্যান হন, সাধারণ সম্পাদক সদস্য সচিব হন। একজন কো-চেয়ারম্যান থাকেন। এ পদটিতে বিজ্ঞ ও সুদক্ষ এইচ টি ইমাম ছিলেন। তার স্থলে ব্যক্তি মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কারা থাকবেন, সেটা সভায় আমরা নেত্রীর ওপরই দিয়েছি। তিনি ২-৪ দিনের মধ্যে ঘোষণা করবেন।’
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘নির্বাচন পরিচালনা কমিটি হয়ে গেছে, কো-চেয়ারম্যান পদ পূরণ বাকি। এটিও শিগগির নেত্রী ঠিক করবেন। কমিটিতে ওয়ার্কিং কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা থাকবেন।’
দলটির আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, ‘গত কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটি প্রায় হয়ে গেছে। কিছু পদ বাকি, সেটা পূরণ করে শিগগির ঘোষণা দেওয়া হবে।’ তবে কো-চেয়ারম্যান কে হচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি ঠিক হয়নি। দলীয় সভাপতি ঠিক করবেন। শিগগির জানানো হবে।’
১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ার পদটি সৃষ্টি করে এবং সেই সময়ে নির্বাচন পরিচালনার কো-চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক আমলা শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে। পরবর্তীসময়ে ২০০৮ এর নির্বাচনের আগে নির্বাচন পরিচালনার কো-চেয়ার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় হোসেন তৌফিক ইমাম বা এইচ টি ইমামকে। আমৃত্যু তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন। এইচ টি ইমামের মৃত্যুর পর এই পদে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের নাম আলোচনায় আসে। কারণ তিনি বেশ কিছুদিন ধরে এইচ টি ইমামের নির্ধারিত রুমেও বসেন। বিভিন্ন জেলা সফর করে কাজও করছেন। অনেক জায়গায় তাকে এইচ টি ইমামের স্থালাভিষিক্ত বলেও পরিচয় করে দিতে দেখা গেছে। তবে, সম্প্রতি এই আলোচনাটিও বাঁক নিয়েছে।
বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে দেখা যায়, এইচ টি ইমামের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ অথবা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক। তবে বয়স ও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ আসতে পারেন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা।
সূত্র : জাগো নিউজ