মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ময়মনসিংহ :
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার আউটিয়াল গ্রামের আনিসুরের রহমানের স্ত্রী হাসিনা (৩৫)। অস্ত্রোপচারের তিনমাস পরও পেটে ব্যথা অনুভব করছিলেন তিনি। পরে আলট্রাসনোগ্রাফিতে ধরা পড়ে ভেতরে মপ (রক্ত পরিষ্কারের জন্য তুলা ও কাপর দিয়ে তৈরি বস্তু) রেখেই সেলাই করে দিয়েছেন চিকিৎসক।
জায়গাটিতে ইনফেকশন হয়ে যাওয়ায় ৭৬ শতাংশ জরায়ু ও ফেলোপিয়ান টিউব (বাচ্চা থাকার থলে) কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত ইনফেকশন হওয়ায় পায়খানার রাস্তায় বাইপাস করে দেওয়া হয়েছে। এখন মৃত্যু পথযাত্রী ওই নারী।
ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া ব্রাহ্মপল্লী ১৩/বি হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে এমনই ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১৮ অক্টোরব) বিষয়টি জানাজানি হয়। ভুক্তভোগী হাসিনার স্বামী আনিসুর রহমান পেশায় একজন রিকশাচালক। তার আরও দুটি মেয়ে রয়েছে। গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. রুপা আক্তারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।
আনিসুর রহমানের ভাষ্যমতে, গত ১৭ জুন সকালে হাসিনার প্রসব ব্যথা শুরু হয়। পরে তাড়াহুড়ো করে ওইদিন সন্ধ্যায় নগরীর চরপাড়া হেলথ কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. রুপা আক্তার সিজার করেন। সিজারে ছেলে সন্তান জন্ম দেন হাসিনা।
সিজারের পর মা-ছেলে দুজনই সুস্থ ছিলেন। ২০ জুন ক্লিনিক থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তবে ক্ষত সারছিল না। পরে স্থানীয় চিকিৎসক দিয়ে ড্রেসিং করানো হয়। ড্রেসিং করার সময় ক্ষত জায়গায় একটি সুতা পাওয়া যায়। সেলাইয়ের সুতা হবে ভেবে ওই সুতা কেটে ফেলেন স্থানীয় চিকিৎসক। তবে ক্ষত ঠিক হচ্ছিল না। হাসিনা শুধু বলতেন তার পেটে ব্যথা করে। পরে গত ২১ জুলাই তাকে কমিনউনিটি বেসড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেও তার অবস্থার অবনতি হলে ১৪ দিন পর বাড়িতে নিয়ে আসেন।
গত ১৪ আগস্ট ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় হাসিনাকে। সেখানে আলট্রাসনোগ্রাফিতে ধরা পড়ে জরায়ুতে গজের মতো কিছু একটা রয়েছে। যে কারণে ভেতরে ইনফেকশন হয়ে গেছে। খুব তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচার করাতে হবে। পরে অস্ত্রোপচারে ৭৬শতাংশ জরায়ু ও ফেলোপিয়ান টিউব কেটে ফেলে দিতে বাধ্য হন চিকিৎসক। মাত্রাতিরিক্ত ইনফেকশন হওয়ায় পায়খানার রাস্তায় বাইপাস করে দেওয়া হয়েছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আনিসুর রহমান বলেন, ‘বাড়িতে নেওয়ার পর হঠাৎ করে পড়ে গিয়ে আর কোনো কথাবার্তা বলতে পারছে না আমার স্ত্রী। আমি দরিদ্র রিকশাচালক। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য এরই মধ্যে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ করে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। স্ত্রীকে আবার হাসপাতালে আনার মতো আমার সামর্থ্য নেই।’
এ বিষয়ে অস্ত্রোপচার করা চিকিৎসক রুপা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার স্বামী আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। ডা. রুপা আক্তারের স্বামী আরাফাত বলেন, এমন ভুল অনেক হয়। তবে, আমরা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘সাধারণ ক্লিনিকে না গিয়ে সরকারি কোনো হাসপাতালে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে সিজার করানো ভালো। সিজার না করিয়ে নরমাল ডেলিভারি হলে আরও ভালো।’
এ বিষয়ে হেলপ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালের ম্যানেজার রুহুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ভর্তি করে বাইরের চিকিৎসক দিয়ে সিজার করে দিয়েছি। এখন চিকিৎসক জরায়ুর ভেতরে কী রেখে অপারেশন করেছে সেটা তো আমাদের দেখার বিষয় না। তারপরও আমরা রোগীর স্বজনদের খবর দিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু তারা পরে আর কোনো যোগাযোগ করেনি। এসময় তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করে কেউ কিছু করতে পারে না।
এ-বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।