ই-পেপার | বুধবার , ৩রা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পেকুয়ায় সাবেক সাংসদ জাফর আলমের বিচার ও চেয়ারম্যান ওয়াসিমের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

পেকুয়া(কক্সবাজার) প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের পেকুয়ার সাবেক সাংসদ জাফর আলমের বিচার ও চেয়ারম্যান ওয়াসিমের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

২১ জানুয়ারি বিকাল ৪ টায় পেকুয়া এ বি সি আঞ্চলিক মহাসড়কের চৌমুহনী পয়েন্টে মগনামার আপামরজনতা নারী পুরুষ দীর্ঘ লাইন ধরে এ মানববন্ধন এ উপস্থিত হয়ে কক্সবাজার ১ চকরিয়া পেকুয়া আসনের সাবেক সাংসদ জাফর আলমের অত্যাচারের দাবীতে ও তার বাহিনী মগনামার ত্রাস বহু আলোচিত হত্যার ঘটনার উষ্কানিদাতা মানবতা বিরোধী দন্ডপ্রাপ্ত জামাত নেতা গোলাম আজমের দেহরক্ষী মগনামা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াসিমের ফাঁসির দড়িতে ঝুলার দাবী তুলে বক্তব্য দেন।

মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার বাবুল।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন তাদের হাতে নির্যাতিত উপজেলা ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ আজম, সাবেক ছাত্র নেতা মমতাজ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহবায়ক সাবেক ছাত্র নেতা কফিল উদ্দিন বাহাদুর, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্যাতিত সোলতান মোহাম্মদ রিপন, তাতীলীগের সভাপতি জায়েদ মোশেদ, যুবলীগ মোস্তাকসহ শতশত ভুক্তভোগী।

এসময় ভুক্তভোগী আলোচিত হত্যা আবু ছৈয়দের স্ত্রী বুলবুল বলেন আমার স্বামী কে সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াসিমের হকুমে তার সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে এ হত্যা করে পা কেটে উল্লাস করে। আমি যখন মামলা করতে থানায় যায় তখন জাফর আলম সাবেক এমপি আমাকে হুমকি দেয় এবং মামলা না নিতে বলে দেয় ওসিকে। তিনি আরো বলেন ,যখন আমার স্বামী কে হত্যা করা হয় তখন আমার ছেলের বয়স তিন বছর। আমার ছেলে এখন বাবাকে খুজে আর কান্না করে। আমি আমার স্বামীর হত্যার বিচার ও ওয়াসিমের ফাঁসির দাবী জানাচ্ছি।

আওয়ামী লীগ নেতা ও ভুক্তভোগী রিপন চৌধুরী বলেন গত পাচ বছরে আমি ওয়াসিমের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। আমাকে অহেতুক হত্যা মামলা ও অস্ত্র দিয়ে পুলিশের হাতে আটক করিয়ে জেলে পাঠায়। এমনকি আমাকে পিঠিয়ে পা দুইটা ভেঙ্গে দেয়। দীর্ঘ ৮ মাস জেলভোগ করে বের হয়। আমি এ ত্রাসের সৃষ্টি কারী ওয়াসিমের বিচার ও ফাঁসির দাবী জানাচ্ছি।

ভুক্তভোগী মৎস্যচাষী জিয়াবুল করিম বলেন আমি মগনামার মৎস্য প্রজেক্ট বেঙ্গল টি মাছ চাষ করতাম। একদিন সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াসিম তার সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমাদের মৎস্য প্রজেক্ট থেকে মাছ লুট করে দিনদুপুরে। তার প্রতিবাদ করায় আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে ঘর ছাড়া করেছে গত ৫ বছরে আমি ঘরে আসতে পারি নাই। আমার পরিবারের উপর নির্মম নির্যাতন চালায়।

আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক বলেন, আমি বিদেশ ছিলাম দেশে এসে যখন মৎস্য চাষ ও লবণ ব্যবসা করি তখন এ চেয়ারম্যান ওয়াসিম আমাকে কল করে তার বাহিনীতে যোগ দিতে বলে। যখন আমি তার কথায় সাড়া দিই নাই তখন সে আমার থেকে ৫০লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। চাঁদা না পেয়ে আমাকে হত্যার হুমকি দেয় এবং বিভিন্ন মামলায় আসামী করে ও ৪ টি অস্ত্র দিয়ে আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। অন্যায় ভাবে আমাকে ও আমার পরিবার কে অত্যাচার করেছে সাবেক চেয়ারম্যান এ ওয়াসিম।

মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরী বলেন, আমার কোন ঘরবাড়ি নেই। গত ৫ বছরে এমপি জাফর ও তার বাহিনী সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াসিম সন্ত্রাসী দিয়ে আমার ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছে। আমাকে ইয়াবা ও অস্ত্র দিয়ে ৪ টি মামলা দিয়েছে। এসব বিষয়ে থানা কোটে গিয়ে মামলা করতে গেলে মামলা নিতো না এমপি জাফরে অনুমতি ছাড়া। এ ওয়াসিম মগনামার সাধারণ মানুষের উপর স্টীমরোলার চালিয়ে গত ৫ বছর তার অত্যাচারে আমিসহ সাধারণ মানুষ রেহায় পায়নি। তার নেতৃত্ব চলছিল দখল ও অত্যাচার। সে কয়েকটি ঘটনার জন্ম দিয়ে এলাকাকে প্রশাসন সহ সর্বমহলে আলোচিত করেছেন। তার অবৈধ দখল ও এমপি জাফরের অত্যাচার থেকে রেহায় পেতে আজ পরিবর্তন করেছে এ আসনের এমপি। সে দমক ও হুমকি দিয়ে নিরহ ব্যবসায়ীদের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা নিয়েছিল। কিন্তু এসবের প্রতিবাদ করলে করা হত হত্যা বা অস্ত্র মামলা। এসব বিচারের দাবীতে আজকের এ মানববন্ধন।

প্রধান অতিথি উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি যখন উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে শপথ নেওয়ার ৪ মাস পর আমাকে ও আমার চার ভাইকে অস্ত্র দিয়ে আটক করায় এমপি জাফর। আমাকে ওই এমপি জাফর দ্রুত বিচারের মাধ্যমে ২১ বছর সাজা দেওয়া হয়। পরে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে সাজা কেটে আমি আপনাদের কাছে সেবা করতে আসি। তারপরও এমপি জাফর আমাকে নানাভাবে ঘায়েল করতে চেষ্টা করে। আমি আপনাদের সে দেওয়া রায়ের জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রতিদান দিতে পারি নাই। এমপি জাফর পেকুয়া বাজারে অনেক নিরহ লোকজনের জায়গা অবৈধ ভাবে দখল করে বহুতলা মাকের্ট করেছে। মালিকরা থানা ও কোর্টে গেলে এমপি জাফরের কারণে মামলা নিতো না। এমপি জাফর আলমের ইন্ধনে মগনামার ওয়াসিম তার এলাকার নিরহ লোকজনকে নির্যাতন করতো নানাভাবে। সেকারণেই আজ এলাকার মানুষ সোচ্চার হয়েছে প্রতিবাদ করতে। আমি সাবেক এমপি জাফর আলম ও ওয়াসিমের বিচার দাবী করছি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে।

পরে মানববন্ধন শেষে উপজেলা ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ আজমের নেতৃত্বে সাবেক সাংসদ জাফর আলমের বিচার ও চেয়ারম্যান ওয়াসিমের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।