বিশেষ প্রতিনিধি :
আইএমএফের ঋণের শর্ত হিসেবে গত ডিসেম্বর শেষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সংকটের মধ্যেও কয়েকটি ব্যাংক থেকে ডলার কিনে রিজার্ভ বাড়িয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) পাওনা ১২৭ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে আবার ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে।
আইএমএফের হিসাব পদ্ধতিতে মঙ্গলবার দিন শেষে গ্রস বা মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে। অন্যদিকে নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলারে। ৩১ ডিসেম্বর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে নিট রিজার্ভ ছিল ১৭ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার, আইএমএফের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা কিছুটা কম।
আকু হচ্ছে একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে দুই মাস অন্তর বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়।
আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। ঋণের জন্য বিভিন্ন শর্ত মানতে হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৯ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। ঋণের শর্ত হিসেবে প্রথমে বলা হয়েছিল, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে নিট রিজার্ভ রাখতে হবে ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। পরে বাংলাদেশের আবেদনের কারণে তা কমিয়ে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত রাখা সম্ভব হয় ১৭ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। এর মানে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রিজার্ভ কম ছিল ৬০ কোটি ডলার। আগামী মার্চের লক্ষ্যমাত্রা ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। আর জুনে রাখতে হবে ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা অব্যাহত আছে। তবে রেমিট্যান্স কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছে না। রপ্তানিতেও ধীর গতি রয়েছে। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে তারল্যের সংকট কাটছে না। এলসির দায় নিষ্পত্তির জন্য বিভিন্ন ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ধরনা দিচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতির মধ্যেই রিজার্ভ বাড়াতে গত মাসে প্রচুর ডলার কেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক থেকে সাম্প্রতিক সময়ে কেনা হয় ১০৪ কোটি ডলার। পাশাপাশি ডিসেম্বর মাসে আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৯ কোটি, এডিবির ঋণের ৪০ কোটিসহ আরও কিছু ঋণের অর্থ যোগ হয়। এতে মাসে রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছিল। এর আগে ১৩ ডিসেম্বর গ্রস রিজার্ভ নেমেছিল ১৯ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে।
একসময় বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের মতো করে রিজার্ভের হিসাব করত। সে অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২৫ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। তবে গত জুলাই থেকে আইএমএফের বিপিএম৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী গ্রস ও নিট রিজার্ভের হিসাব করতে হচ্ছে। গ্রস রিজার্ভ থেকে আগামী এক বছরে সরকারের দায় বাদ দিয়ে নিট রিজার্ভের হিসাব হয়। সব মিলিয়ে নিট রিজার্ভ হিসাবের ক্ষেত্রে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের মতো বাদ যাবে। সে অনুযায়ী নিট রিজার্ভ এখন ১৫ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য বিভিন্ন উৎসের ঋণ ও বাজার থেকে ডলার কেনার পাশাপাশি মাঝে ডলার বিক্রি অনেক কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বেশ কয়েক দিন বন্ধ রাখার পর গতকাল মঙ্গলবার কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৭ কোটি ৪৫ লাখ ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলার উঠেছিল ২০২১ সালের আগস্টে। তবে করোনা-পরবর্তী পণ্যের দর বৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলারের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। রিজার্ভ থেকে বাজারে প্রচুর ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে ৭ বিলিয়ন ডলারের মতো। আর ২০২১ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভ কমার পাশাপাশি ডলারের দরও অনেক বেড়েছে।