ভ্রমণ ডেস্ক :
ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখি। সাইপ্রাসের মতো দেশ যখন বরফের আস্তরণে আবৃত, তখন সে দেশের পাখিরা এ দেশ ভ্রমণে শত শত মাইল পথ পাড়ি জমায়। আর রং-বেরঙের পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে বাংলার খাল-বিল ও প্রকৃতি।
ঋতু বৈচিত্র্যে বাংলায় এখন পৌষ মাস। শীতের শুরু। কুয়াশায় মোড়ানো সকালে ভেসে আসা কিচিরমিচির যেন বিস্তৃত এক জলাশয়ের গল্প বলে।
‘বাইক্কা বিল’ নাম তার। যে জলাশয়ে সুন্দর সময় কাটাচ্ছে পরিযায়ী পাখির দল। হাজারও মাইল পাড়ি দেওয়ার একটাই কারণ একটু উষ্ণতা।
বাইক্কা বিল চায়ের স্বর্গরাজ্য শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের পূর্বদিকের ১০০ হেক্টর আয়তনের একটি জলাভূমির নাম। শ্রীমঙ্গল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ও হাইল হাওরের দিকে ১০০ হেক্টর জলাভূমি নিয়ে অপরূপ সৌন্দর্যের এই বাইক্কা বিল গঠিত।
শীতে বাইক্কা বিলের মূল আকর্ষণ পরিযায়ী পাখি ৷ বিলের শুরুতেই দেখা যাবে দলে দলে বেগুনি কালেম ৷ পাশেই হয়তো দেখবেন ছোট পানকৌড়ি বা বড় পানকৌড়ির দল ৷ শুধু পাখিই নয়, জলাশয়ে আছে অসংখ্য প্রজাতির মাছ।
এছাড়া এই বিলের দাপুটে পাখিরা হলো শঙ্খচিল, ভুবন চিল, পালাসী কুড়া ঈগল, গুটি ঈগল ইত্যাদি। শীতের এ মৌসুমে আরও দেখা যায় বিল সরালি, মরচেরং ভূতি হাঁস, গিরিয়া হাঁসের ভেসে বেড়ানো।
শীতের এ সময়টাতে বাইক্কা বিল যেন স্নিগ্ধতার এক রূপ ধারণ করেছে। সত্যিই অসাধারণ সেই রূপ। প্রতিটা মুহূর্তই রোমাঞ্চকর। তাই তো মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠেছে এই বাইক্কা বিল।
পরিযায়ী পাখি দেখতে বাইক্কা বিলে এরই মধ্যে সকাল-বিকেল আসতে শুরু করেছে পর্যটক। সাধারণত নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই বাইক্কা বিলে অতিথি পাখির সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে এবার ডিসেম্বরে বেড়েছে। সকালবেলা পাখিগুলো বিলের পাড়ের কাছাকাছি অবস্থান করে। রোদ বাড়তেই তারা পাড় থেকে দূরের দিকে সরে যায়। তখন তারা শাপলা-শালুকের ঘন আড়ালে লুকোচুরি করে।
উষ্ণতা বাড়লে পরিযায়ী পাখিরা আবার ফিরতে শুরু করবে নিজ দেশে। ছুটির ঘণ্টা বাজিয়ে নিজ ভূমিতে যাওয়ার জন্য পাড়ি দিবে লম্বা পথ। তবে নিরাপদ ভেবে যে তারা এই বাংলায় আসলো সেটা কি এই পরিযায়ীদের জন্য কল্যাণকর হয়েছে!
শিকারির ফাঁদে পড়ে প্রতি বছর এসব পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমছে। প্রকৃতি হারাচ্ছে তার নিজস্ব রূপ, বিলুপ্ত হচ্ছে নানা প্রজাতির পাখি। তাই প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অতিথি পাখিদের নিরাপত্তা দেয়া জরুরি।
যারা রাজধানী থেকে বাইক্কা বিল ঘুরে আসতে চান তাদের ট্রেনে কিংবা বাসে শ্রীমঙ্গল যেতে হবে। ঢাকার কমলাপুর থেকে সিলেটগামী উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত ও কালনি এক্সপ্রেস ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন।
শ্রেণিভেদে ভাড়া পড়বে ২৪০-১০০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া হানিফ, এনা, শ্যামলী ও সিলেট এক্সপ্রেসের বাসে চড়ে শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন। শ্রীমঙ্গল গিয়ে ইজিবাইক, অটোরিকশা করে সহজে বাইক্কা বিল ঘুরে আসতে পারবেন।