ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ

মুহাম্মদ আমির হোছাইন

….ও কারিগর, দয়ার সাগর, ওগো দয়াময়
চান্নি পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়…

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের আজ (১৩ নভেম্বর) জন্মদিন। হুমায়ূন আহমেদ একের পর এক সৃজনশীল উপন্যাস দিয়ে বাংলা সাহিত্যের আকাশে জ্বলে উঠেছিলেন। ‘নন্দিত নরকে’ ও ‘শঙ্খনীল কারাগার’ এবং বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’। সহজ-সরল ভাষার সঙ্গে সংলাপধর্মী উপন্যাসটি সহজেই আকৃষ্ট করেছিল সাহিত্যানুরাগীর মননে আর সৃজনশীলতায় মোহাচ্ছন করে রেখেছেন পাঠককে। তবে তাঁর সৃষ্ট অসাধারণ চরিত্র হিমু এবং মিছির আলি ” দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও জননন্দিত কথাসাহিত্যিকের পরিচয় এনে দিয়েছে। তাঁর গল্প বা উপন্যাসের রহস্যে বিভোর করে রেখেছিলেন পাঠককে।

তিনি সাহিত্য ও শিল্পের বর্ণময় পথে ফুল ছিটিয়েছে গান ,গল্প, কবিতাউপন্যাস দিয়ে । তার মত কয়জনেই গল্পেই মানুষের জীবেনর সুখ- দুঃখ কথা তুলে ধরছেন। ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পর পরই তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। উপন্যাসে ও নাটকে তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণীয়।দেশে এমন মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়, যারা তাঁর অন্তত একটি নাটক দেখেনি কিংবা তাঁর কোনো বই পড়েনি।

বাংলা সাহিত্যের প্রভাত পুরুষ হুমায়ূন আহমেদের লেখা উপন্যাসের সংখ্যা দুই শতাধিকসহ চার শত বই। এগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খনীল কারাগার, মন্দ্রসপ্তক, দূরে কোথায়, সৌরভ, ফেরা, কৃষ্ণপক্ষ, সাজঘর, বাসর, গৌরীপুর জংশন, নৃপতি, অমানুষ, বহুব্রীহি, এসব দিনরাত্রি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমনি, শ্রাবণ মেঘের দিন, বৃষ্টি ও মেঘমালা, মেঘ বলেছে যাব যাব, জোছনা ও জননীর গল্প, দেয়াল, বাদশাহ নামদার প্রভৃতি।শুধু রচনাই নয় ও পরিচালনা করেছেন বহু একক ও ধারবাহিক নাটক। পরিচালনা করেছেন চলচ্চিত্রও। তাঁর সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র জন্য জয় করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

হুমায়ূন আহমেদের দীর্ঘ চার দশকের সাহিত্যজীবনে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে, একুশে পদক (১৯৯৪), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূধন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) ইত্যাদি। দেশের বাইরেও সম্মানিত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। জাপানের ‘এনএইচকে’ টেলিভিশন তাঁকে নিয়ে ‘হু ইস হু ইন এশিয়া’ শিরোনামে পনের মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি প্রচার করে। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে। পুলিশ কর্মকর্তা বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও আয়েশা ফয়েজের কোল আলোকিত করে জন্ম নেন বাংলার সাহিত্য এই প্রাণ পুরুষ ।

হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় লেখক বলে গণ্য করা হয়। তাঁর অকালপ্রয়াণ হয়েছে। তাঁর কাছে বাংলার মানুষের আরও অনেক প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু মরণব্যাধি ক্যানসার কেড়ে নিয়েছে তাঁর জীবন। তিনি চিরকাল বাংলার অগণিত পাঠকের মধ্যমণি হয়ে রইবেন। শুভ হোক আপনার জন্মদিন।