ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ম্যাক্সওয়েলের ইনিংসটি ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা: কামিন্স

ক্রীড়া বাংলা :

এক পায়ে ভর দিয়ে মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলে ফেলেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এই অজি ব্যাটারের অপরাজিত ২০১ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংসে ভর করে রেকর্ডগড়া জয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়া। সতীর্থের এই কীর্তি ক্রিজের অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে উপভোগ করার পর অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স বললেন, ‘ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা ইনিংস এটি’। মুম্বাইয়ে গতকাল আফগানিস্তানের ছুড়ে দেওয়া ২৯২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৯তম ওভারেই ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। স্বীকৃত ব্যাটার বলতে তখন ছিলেন কেবল ম্যাক্সওয়েল। প্রায় একক প্রচেষ্টায় অধিনায়ক কামিন্সকে নিয়ে অষ্টম উইকেটে ২০২ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন ‘ম্যাক্সি’। অথচ ইনিংসের মাঝপথে পায়ে শিরটানের কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে খেলতে হয়েছে তাকে। মাঝে দুইবার লেগ বিফোরের আবেদন ব্যর্থ করে এবং একবার ক্যাচ মিসে জীবন পেয়ে দারুণভাবেই কাজে লাগিয়েছেন তিনি।

 

অন্যপ্রান্তে কামিন্স শুধু স্ট্রাইক বদল আর উইকেট ধরে রাখার দিকেই পুরো মনোযোগ ধরে রাখেন। যে কারণে ৬৮ বলের মোকাবিলায় অপরাজিত ১২ রান করেন তিনি। অন্যদিকে ১২৮ বলের ইনিংসে ২১টি চার ও ১০টি ছক্কা হাঁকান ম্যাক্সওয়েল। দৌড়ে রান নিতে সমস্যা হওয়ায় শেষদিকে শুধু চার ও ছক্কাই ভরসা। এক পায়ে সমস্যা থাকায় তার পক্ষে ‘ফুটওয়ার্ক করা ছিল অসম্ভব। নিজের চোখ আর হাতের ওপর পুরো ভরসা রাখতে হয়েছে তাকে।ম্যাচের শেষদিকে কয়েকবার এমনও হয়েছে, চোট আর ক্লান্তি মিলিয়ে ম্যাক্সওয়েলের জোর করে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়ার সম্ভাবনাও দেখে দিয়েছিল। যে কারণে বাউন্ডারি লাইনের বাইরে অনেকটা সময় ব্যাট-প্যাড নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন লেগ স্পিনার ও লোয়ার অর্ডার ব্যাটার অ্যাডাম জাম্পা। কিন্তু ম্যাক্সওয়েল হাল ছাড়েননি। সব বাধা অতিক্রম করে লড়াকু মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমানের এক ওভারে তিন ছক্কা ও ১ চারে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন ম্যাক্সওয়েল। সেই সঙ্গে প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ও সবমিলিয়ে নবম ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডে ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি।

 

 

ম্যাক্সওয়েলের ওই ‘ওয়ান-ম্যান ফাইটব্যাক’ প্রশংসিত হচ্ছে পুরো ক্রিকেটবিশ্বে। কিন্তু তার নিজের অনুভূতি কেমন? ম্যাচ সেরার পুরস্কার হাতে তিনি বলেন, ‘ভয়ানক! আমি এখনও বুঝতে পারছি না কী হয়েছে! ফিল্ডিংয়ের সময় এখানে অনেক গরম ছিল এবং খেলার আগে খুব বেশি অনুশীলনও করিনি। যতক্ষণ না আমি মুভমেন্ট কিছুটা ফিরে পাচ্ছি, ততক্ষণ আমাদের পরিকল্পনা ছিল এক প্রান্ত ধরে খেলতে এবং ভাগ্যক্রমে শেষ পর্যন্ত আমরা তা পেরেছি। কিছু সুযোগও পেয়েছি। যে কারণে নিজেকে ভাগ্যবান ভাবাই যায়। তবে যা হয়েছে তাতে আমি গর্বিত।তবে ম্যাক্সওয়েলের মতো অত রয়েসয়ে প্রতিক্রিয়া জানাননি কামিন্স। নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে দাঁড়িয়ে যা দেখলেন তা তার নিজের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। যে কারণ ম্যাচ শেষ তিনি বলেন, ‘এককথায় অসম্ভব… আমি জানি না কীভাবে এর ব্যাখ্যা করা সম্ভব। ম্যাক্সি ছিল আউট অব দ্য ওয়ার্ল্ড। এটাই ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা ইনিংস হওয়া উচিত। আমরা সত্যিই ভাগ্যবান যে এখানে আছি। আমি স্ট্রাইকে যেতে পারছিলাম না (হাসি)। ‘

 

 

ম্যাক্সওয়েলের প্রশংসায় ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ‘ম্যাচে ৭০ ওভার আফগানরা ভালো খেললেও, শেষের ২৫ ওভার ম্যাক্সওয়েল তাদের জেতার আর কোনো সুযোগ দেয়নি। ম্যাক্স প্রেসার থেকে ম্যাক্স পারফরম্যান্স। এটা আমার জীবনে দেখা সেরা ওয়ানডে ইনিংস। ‘

সিএনএন বাংলা২৪