ক্রিড়াবাংলা:
সুপার ফোরে উঠতে ৫৫ রানে জয় পাওয়া দরকার ছিল বাংলাদেশের। বাংলাদেশ জিতল ৮৯ রানে। আর এই জয়ে গতবারের আক্ষেপকে বিদায় করে সুপার ফোরে বাংলাদেশ।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) আফগানিস্তানকে ৮৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাট-বলে আফগানদের কোনো পাত্তা না দিয়ে উঠে গেছে গ্রুপের শীর্ষে। তাই শেষ ম্যাচে ফলাফল যা-ই হোক, তাতে সুপার ফোর আটকাবে না বাংলাদেশের।
এশিয়া কাপে গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে কঠিন সমীকরণ সামণে রেখে মাঠে নামে বাংলাদেশ। বড় জয় ছিনিয়ে নেট রানরেটে এগিয়ে থাকতে ব্যর্থ হলে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাবে টাইগাররা। এমন পরিস্থিতিতে মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরির উপর ভর করে ৩৩৪ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ১ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। এরপর থেকে রান চাপে পড়ে কোণঠাসা হয় আফগানরা। শেষ পর্যন্ত ৪৪.৩ ওভারে ২৪৫ রানেই আটকে যায় রশিদ খানদের ইনিংস। এর মধ্য দিয়ে ৮৯ রানের জয় পেয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোর নিশ্চিত করেছে।
বড় লক্ষ্য সামনে রেখে আফগানিস্তানের হয়ে ওপেনিং করেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহীম জাদরান। শরীফুল ইসলামের করা দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পা দেন গুরবাজ। তবে আম্পায়ার তখন আঙ্গুল তোলেননি এবং টাইগার অধিনায়কও দ্বিধায় ছিলেন ডিআরএস নেয়ার জন্য।
এর দুই বল পরই ফের লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে আউট হন গুরবাজ। রিভিউ নিয়েও তিনি উইকেটে টিকে থাকতে পারেননি। শুরুতেই একটি উইকেট হারিয়ে ইব্রাহীমের সঙ্গে শক্ত জুটি গড়েন রহমত শাহ। রানে গতি দিতে না পারলেও তিনি উইকেট পতন ঠেকান। দুই ব্যাটার ধীর গতিতে দলকে এগিয়ে নিতে থাকে। টাইগার বোলারদের একের পর এক আক্রমণেও কোনো ফলাফল আসছিলো না।
তবে ১৮তম ওভারে ব্রেকথ্রু এনে দেন তাসকিন আহমেদ। তার দ্রুত গতির বলে বোল্ডের শিকার হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন রহমত। এরপর অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদীকে সঙ্গী করে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন ইব্রাহীম। সেই চেষ্টায় অনেকটাই সফল ছিলেন তিনি। ২৭.৩ ওভার পর্যন্ত তিনি দলের জন্য লড়াই করেন। তরুণ পেসার হাসান মাহমুদের বলে ইব্রাহীম ৭৫ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে যান।
এরপর নাজিবুল্লাহ জাদরান ১৭ রান করে আউট হন শরীফুল ইসলামের বলে। এর মধ্যে ফিফটির দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ। শরীফুলের ৩৮তম ওভারে তিনিও ৫১ রান করে আউট হলে চাপে পড়ে আফগানিস্তান। এরপর একে একে গুলবাদিন ১৫ রানে, মোহাম্মদ নবী ৩ রানে, করিম জানাত ১ রানে, মুজিবুর রহমান ৪ রানের ইনিংস খেলে এবং রশিদ খান ২৪ রানে আউট হন। শেষ পর্যন্ত ১ রানে অপরাজিত ছিলেন ফজলহক ফারুকি।
এর আগে কঠিন পথ পাড়ি দিতে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম শেখ। ২৮ রান করে নাঈম আউট হওয়ার পরই ডাক মেরে সাজঘরের পথ ধরেন তাওহিদ হৃদয়। এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত মাঠে এসে মিরাজের সঙ্গে জুটি বেঁধে শক্ত হাতে দলের হাল ধরেন।
দুই ব্যাটারের ১৯৪ রানের পার্টনারশীপের উপর ভর করেই বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। মিরাজ-নাঈমের ওপেনিংয়ে ভালো শুরুই করে বাংলাদেশ। দশম ওভারে নাঈম আউট হওয়ার পর একাদশ ওভারে সাজঘরে ফিরে যান হৃদয়ও। পরপর দুটি উইকেট হারিয়ে বড় ধাক্কাই খায় বাংলাদেশ।
এমন পরিস্থিতিতে দলের ত্রাতা হয়ে উঠে মিরাজ-শান্ত জুটি। তাদের রক্ষণাত্মক-আক্রমণাত্মক ভঙ্গির সংমিশ্রণে বাংলাদেশের রানের গতি বাড়ার সঙ্গে দুই ব্যাটারের অবস্থানও শক্ত হয়। কোনো ওভারে রান নিতে না পারলে তারা অন্য কোনো ওভারে চার-ছক্কায় রান রেট ঠিক রাখার চেষ্টা করেন। দলের স্কোরবোর্ড ভারী করার পথে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূরণ করেন মিরাজ। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আফগান বোলারদের পরীক্ষা নেন শান্তও।
শেষ পর্যন্ত মুজিবুর রহমানের বলে একটি হাঁকিয়ে তিনি আঙ্গুলে চোট পান। যার কারণে ১১২ রানে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। এর মধ্য দিয়ে থেমে যায় শান্ত-মিরাজের ১৯০ বলে ১৯৪ রানের পার্টনারশিপ। এর পরপরই শান্ত ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেন। শতরান ছোঁয়ার পর ৪ রানের বেশি করতে পারেননি শান্ত।
এক রানের জন্য প্রান্ত বদল করতে গিয়ে তিনি উইকেটের মাঝখানে পড়ে যান। আর সেই সুযোগে আফগান উইকেটরক্ষক তাকে রানআউট করেন। মিরাজ-শান্ত সাজঘরে ফেরার পর বাংলাদেশের হাল ধরেন সাকিব ও মুশফিক। তারাও নির্ভয়ে ব্যাট চালাতে শুরু করেন। মুশফিক আউট হন ১৫ বলে ২৫ রান নিয়ে।
এরপর ক্রিজে আসেন আজকের ম্যাচে অভিষেক হওয়া শামীম। তিনি মাঠে এসে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে আন্তর্জাতিক ম্যাচে শামীম ৬ বলে ১১ রানের ইনিংস খেলে আউট হন। এরপর আফিফকে সঙ্গে নিয়ে ১৮ বলে ৩২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব। আর শেষ পর্যন্ত আফিফ অপরাজিত ছিলেন ৩ বলে ৪ রান নিয়ে।