ই-পেপার | বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গাইবান্ধায় বাড়ছে নদীর পানি, দুর্ভোগে শতাধিক পরিবার

 নিজস্ব প্রতিনিধি,গাইবান্ধা

ভারি বৃষ্টি আর উজানের ঢলে গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বাড়ছে। রোববার (২৭ আগস্ট) বেলা ১২টায় তিস্তা নদীর পানি সুন্দরগঞ্জের হরিপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছে শতাধিক পরিবার। এই পানি আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাইবান্ধা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার বেলা ১২টায় ব্রহ্মপুত্র ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গাইবান্ধা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ৮২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালী পয়েন্টে করতোয়া ২.৯৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ সময় নদ-নদীগুলোর পানির স্তর ছিল- তিস্তা ২৯ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র ১৯ দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার, ঘাঘট ২০ দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটার এবং করতোয়া ২ দশমিক ৯৮ সেন্টিমিটার।

উজানে ভারি বৃষ্টি হওয়ার কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া, চীপুর ও কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পাউবো। পাউবোর এক বার্তায় বলা হয়েছে, উজানে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

 

পানি বাড়ায় তিস্তার তীরবর্তী গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু এলাকার বাড়িঘরে পানি উঠেছে। পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্কায় নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন এসব এলাকার মানুষ। এর ফলে নদীপাড়ের মানুষজনের দুর্ভোগ বেড়েছে।

 

রোববার সুন্দরগঞ্জে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিস্তার পানি গত শুক্রবার রাত থেকে বাড়তে শুরু করেছে। উপজেলার বেলকা ও হরিপুর ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকার লোকালয়ে পানি ঢুকে গেছে। অধিকাংশ মানুষের ঘরে হাঁটুপানি। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ ওই এলাকার মানুষেরা আশ্রয় নিতে ছুটছেন বাঁধের ওপর। স্থানীয় এক কৃষক বলেন, তিন দিন ধরে পানি বাড়ছে। পানির মধ্যেই বসবাস করতে হচ্ছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের মধ্যে ৮টিই নদীবেষ্টিত। ৭টি তিস্তা নদী ও একটি ইউনিয়ন ঘাঘট নদীবেষ্টিত। তিস্তা নদী বেষ্টিত ৭ ইউনিয়নের মধ্যে রয়েছে- তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া, চীপুর ও কঞ্চিবাড়ী। আর ঘাঘট নদী বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা এলেই দুর্ভোগ শুরু হয় নদীপাড়ের মানুষদের। তবে ঘাঘট বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুর্ভোগ শুরু হয়েছে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের।

 

হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মোজাহারুল ইসলাম জানান, গত শুক্রবার রাত থেকেই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে তার ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কানি চরিতাবাড়ি, চর চরিতাবাড়ি, লখিয়ার পাড়া, পাড়া সাদুয়া, মাদারীপাড়া ও রাঘব গেন্দুরাম গ্রামে প্লাবন শুরু হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয় নিতে বাঁধে আসতে শুরু করেছেন এসব এলাকার মানুষ।

হরিপুর ইউনিয়নের লখিয়ার পাড়া গ্রামের মো. মোসলেম উদ্দিন (৫৫) বলেন, রাতে ঘুমানোর সময়ও পানি ছিল না। হঠাৎ রাত ১টার দিকে ঘুম ভাঙে পানির শব্দে। জেগে দেখি ঘরের ভেতর পানি ঢুকছে। আমার চারটা ঘরেই এখন হাঁটুপানি। পানি কমছে না বরং বাড়ছে। ঘরের ভেতর টং বানায়া কোনোমতে পরিবার নিয়া আছি। আর ছাগলগুলা জামাইয়ের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেছি।

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাওলানা মো. ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ৩০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করা হচ্ছে। পানি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থা চললে মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে হবে।

 

এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর-এ-আলম বলেন, আমরা ব্যাপক তৎপর আছি। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসহ পরিবারের তালিকা করতে বলা হয়েছে। তালিকা পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও খুলে দেওয়া হয়েছে। বেশি সমস্যা হলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো তাতে আশ্রয় নিতে পারবে।

 

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল ইসলাম জানান, ভারি বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে ইতোমধ্যে তিস্তাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ফলে কোথাও কোথাও উজানের ঢলের পানিতে দুয়েক দিনের জন্য প্লাবিত হচ্ছে। তবে এই বৃষ্টি কমলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করবে।

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪