ই-পেপার | রবিবার , ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভারতের বিপক্ষে স্মরণীয় সাফল্যে নিগারদের বোনাস ৩৫ লাখ টাকা

সিএনএন বাংলা ডেস্ক:

সম্ভাবনা ছিল সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ার। অল্পের জন্য তা হয়নি। তবু যা হয়েছে, সেটিও কম নয়। ভারতের মতো পরাশক্তির বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে জয় এবং সিরিজ ড্র করা বাংলাদেশের বাস্তবতায় মেয়েদের ক্রিকেটে অনেক বড় সাফল্য। স্মরণীয় এই অর্জনের পর বিসিবির থেকে বোনাস পাচ্ছেন নিগার সুলতানা, ফারজানা হকরা।

 

ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শেষ হওয়ার পরদিন টিম হোটেলে গিয়ে আলোচনার পর বোনাসের ঘোষণা দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। পাশাপাশি মেয়েদের ক্রিকেট এগিয়ে নেওয়ার জন্য আরও অনেক পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্তা সংস্থা প্রধান।

আইসিসি উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ৪০ রানের দারুণ জয় পায় বাংলাদেশ। পরে দ্বিতীয়টি হারলেও শেষ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর অসাধারণ গল্প লিখে হারের দুয়ার থেকে ‘টাই’ নিয়ে মাঠ ছাড়েন তারা।

মেয়েদের ক্রিকেটে ওয়ানডেতে বড় কোনো দলের বিপক্ষে এটিই সেরা সাফল্য। ওয়ানডে সিরিজের আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও শেষ ম্যাচটি জিতেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৯৬ রান তাড়ায় শেষ দিকে ধস নেমে ম্যাচ না হারলে হয়তো এই সংস্করণেও সিরিজ জয় ধরা দিত।

এমন অর্জনের পর অভিনন্দন, শুভেচ্ছা আর স্তুতির জোয়ারে ভাসছেন ক্রিকেটাররা। দলের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসিবি সভাপতি জানালেন আর্থিক পুরস্কারের অঙ্ক।

“সাধারণত সিরিজ জিতলে আমরা বোনাস দেই। তবে এবার সিরিজ না জিতলেও প্রথম ওয়ানডে জিতেছে ভারতের সাথে… এজন্য… শেষ ম্যাচে টাই করল…। এছাড়া আমাদের সেঞ্চুরি আছে একটা, বেশ কয়েকটা মেয়ে খুব ভালো পারফর্ম করেছে।”

“সব কিছু মিলিয়ে আমরা শুধু ক্রিকেটারদের জন্য ২৫ লাখ টাকা এবং এর সঙ্গে যারা পারফর্ম করেছে, যেমন সেঞ্চুরির জন্য আলাদা ২ লাখ, যারা ভালো করেছে ওদের জন্য আলাদা আলাদা টাকা- এভাবে আমরা দিচ্ছি। সব মিলিয়ে আমার ধারণা ৩৫ লাখ হবে।”

প্রথম ওয়ানডে জেতার পরই মূলত বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন বিসিবি সভাপতি। তখন তিনি অধিনায়ক নিগারকে বলেছিলেন, সিরিজ জিততে পারলে আরও বড় পুরস্কার থাকবে অপেক্ষায়।

“প্রথম ওয়ানডেতে ওরা জিতল, এটা তো একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। প্রথমবার ভারতের সঙ্গে ওয়ানডে জয়! জেতার পর আমি দেশের বাইরে থেকেই অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলি, ‘অবশ্যই তোমরা একটা বোনাস পাবে। সামনে দুটো ম্যাচ আছে, দেখো সিরিজটা জেতা যায় কি না।’ আমি নিজে যে খুব বিশ্বাস করেছি তা না। তারপরও বলেছি, ‘যদি জিততে পারো, তাহলে তো অস্বাভাবিক কিছু হবেই। তবে খুব ভালো খেলেছো।”

“তারপর যে খেলাটা দেখলাম সিরিজে…একটা জিনিস আমরা বলতে পারি, নিঃসন্দেহে সবাই স্বীকার করবে, মেয়েরা আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তাদের নিবেদনে, দলগত চেষ্টায় কোনো সমস্যা নেই। অনেকের পারফরম্যান্স ভালো উন্নতি করেছে। এগুলো চোখে পড়ার মতো।”

অর্থ পুরস্কারের বাইরে মেয়েদের ক্রিকেটে ঘাটতির জায়গাগুলো নিয়েও এখন কাজ করা হবে বলে জানান নাজমুল হাসান। তিনি জানান, ক্রিকেটারদের চাওয়া অনুযায়ী বেশ কিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।

“আমরা ওদের বোনাস দিয়েছি। তবে এর চেয়ে বড় কথা হলো, আমরা ওদের ব্যাপারটায় আরও মনোযোগ দিচ্ছি। ওরা কিছু পরামর্শ দিয়েছে। আমরা বলেছি, ‘অবশ্যই এগুলো দেখব।’ সাপোর্ট স্টাফ লাগবে, আরও কোচ লাগবে। যেমন ফাস্ট বোলিং কোচ হলে ভালো হয়। এগুলো আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে করব।”

দীর্ঘ দিন ধরেই জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয় ছেলেদের স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এবার মেয়েদের ক্রিকেটেও তেমন কিছু করার পরিকল্পনা বিসিবির।

“এর বাইরে আছে মেয়েদের স্কুল ক্রিকেট। এটা আমরা এই বছর শুরু করতে চাই। এতে করে আমরা নতুন নতুন ক্রিকেটার পাবো আশা করি। ওরা মেয়েদের বিপিএল চেয়েছে। সেটাও আমরা বলেছি যে, নীতিগতভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা সেটা চালু করব এখন।”

এই দলের ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস ও লড়িয়ে মানসিকতায় মুগ্ধতার কথা জানান বিসিবি প্রধান।

“মেয়েদের দলকে আমরা যতটা দুর্বল মনে করি, তারা কিন্তু নিজেদের এত দুর্বল মনে করে না। প্রতিপক্ষ যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তারা সাহস করে খেলছে এবং খেলতে পারে।”

“হারা-জেতা নিয়ে কথা নয়। ওদের অ্যাপ্রোচ, চেষ্টাই হলো সবচেয়ে বড় কথা। আমার খুবই ভালো লেগেছে। আমরা ছেলে ক্রিকেটারদের নিয়ে অনেক কিছু করি, অনেক গর্ববোধ করি। এখন মেয়েদেরকে নিয়ে গর্ব না করার কোনো কারণ নেই। শক্তিশালী ভারতের বিরুদ্ধে ওরা যেভাবে খেলেছে। আমরা অনেক কাছাকাছি চলে এসেছি।”

 

নুর মোহাম্মদ, সিএনএন বাংলা২৪