ই-পেপার | শনিবার , ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাঁশখালীতে ধানের বাম্পার ফলন, শ্রমিক ও হারভেস্টার সংকটে কৃষক

শিব্বির আহমদ রানা,বাঁশখালী প্রতিনিধি:

বাঁশখালীতে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। মে মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে কৃষকের এ কর্মযজ্ঞ। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ধান কাটার ধুম পড়েছে।

এবারের ভালো ফলনে কৃষকের চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেছে। কৃষকরা বলছেন, এ বছর খুবই ভালো ফলন হয়েছে। তবে ধান কাটা, মাড়াই ও ঘরে তোলার কর্মযজ্ঞে দেখা দিয়েছে শ্রমিক ও কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের সংকট। দেশে চলছে তীব্র তাপদাহ। সরকার জারি করেছে হিট এলার্ট।

এ ভয়াবহ তাপমাত্রায় বাড়তি মজুরি দিয়েও শ্রমিক মিলছে না। রয়েছে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের সংকটও। বেশিরভাগ শ্রমিকই লবণ মাঠে সময় দিচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে যথাসময়ে গোলায় উঠবে কৃষকের সোনালী ধান। ফলন ভাল হওয়ায় খুশি কৃষক।

বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারের বোরো মৌসুমে বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১১ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বীজতলার হিসাব এবং মাঠ হিসাব অনুযায়ী ১১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এবার ১১ হাজার কৃষক কে বোরো প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে। এবার নতুন বিনা ধান ২৫ ও বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ চাষ করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার পুঁইছড়ি, চাম্বল, শীলকূপ, বৈলছড়ী, কালীপুর, সাধনপুর, পুকুরিয়া, বাহারছড়া, খানখানাবাদ, কাথারিয়া, ছনুয়া, শেখেরখীল, গন্ডামারা, সরল ও জলদীর কিছু কিছু এলাকায় বোরো ধান কাটা শুরু করেছে কৃষকরা। পাকা ধান ঘরে তুলতে তীব্র রোদেও নিরলস পরিশ্রম করছে মাঠে। স্বপ্নের সোনালী পাকা ধান কৃষকের ঘরে উঠছে। নতুন ধানের সৌরভ ও পাখির কলতানে এখন মুখরিত মাঠগুলো। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে জমির প্রায় সব ধানই ঘরে উঠবে বলে আশা করছেন চাষিরা।

কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, গেল কয়েক বছরের তুলনায় এবার বিলের জমিগুলোতে ধানের ফলন ভাল হয়েছে। বোরোর বাম্পার ফলনে তারা খুশি। এখনো কালবৈশাখী ঝড়ের বড় কোন প্রভাব পড়েনি কৃষিধানে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমরা সোনালী ধান যথাসময়ে ঘরে তুলতে পারবো।

উপজেলার পশ্চিম চাম্বল বাঘচরাইন্যা বিলের (বাইচুন্ন্যা) কৃষক মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমি তিন কানি জমিতে ধান চাষ করেছি। মাঠে ধান পেকেছে। চলছে তীব্র তাপদাহ্। এক হাজার টাকা মজুরি দিয়েও মিলছে না শ্রমিক। সামনে ধানকাটা শুরু হবে পুরোদমে। মজুরীও বাড়বে।

এরপরও শ্রমিক সংকট দেখা দিবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা সাধারণ কৃষকরা তেমন কৃষি সহায়তা পাইনা। এদিকে ধান কাটার মেশিনও নাই। এবার ফলন ভাল হয়েছে। তবে, অতিকষ্টে আমাদের সোনালী ধান ঘরে উঠবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রতিকানি জমিতে চারা রোপন থেকে শুরু করে ধান গোলায় তোলা পর্যন্ত ২৫ থেকে ২৭ হাজার টাকা মতো খরচ হয়ে যায়। যারা শ্রমিক দিয়ে কাজ করে তাদের আরো বেশী। কানিপ্রতি আমাদের হিসেব মতে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা মতো নামমাত্র লাভ থাকে। তাও খড় বিক্রি করলে। এরপরও অনুকূল পরিবেশে সোনালী ধান গোলায় তুলতে পারলে একজন কৃষক হিসেবে তৃপ্তি পাই। এটাই আমাদের ভাল থাকা।’

চাষিরা অভিযোগ করে বলেন- ভরা মৌসুমে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দর কমায়। বাধ্য হয়ে কমদামে ধান বিক্রি করতে হয়। তাই বাজারে তদারকি বাড়ানোর পাশাপাশি ফলন ও উৎপাদন খরচ হিসাব করে সরকারী মূল্য (দর) বেঁধে দেয়ার দাবিও জানান কৃষকরা।

বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আবু সালেক জানান, ‘বাঁশখালীতে ধান মাত্র কাটা শুরু হয়েছে। মে মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত লাগবে। আবাদ ভাল হয়েছে। ভালভাবে কর্তন সম্পন্ন করতে পারলে কৃষক ভাল ফলন পাবেন। প্রাকৃতিক দূর্যোগের কথা মাথায় রেখে ৮০% পেকে গেলেই কর্তন করার জন্য মাঠপর্যায়ে কৃষককে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ধান কাটার লোক কম, মজুরী বেশি। কৃষক অন্য কাজে নিয়োজিত। বিশেষ করে লবণ মাঠেই সময় দিচ্ছে কৃষিশ্রমিক। কালিপুর, বাহারছড়া, ছনুয়া, শেখেরখীলে আমাদের ধান কাটার মেশিন আছে।’