ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ইতিহাসের রেকর্ড ভাঙা জয় বাংলাদেশের

ক্রিড়া প্রতিবেদক:

২০১৯ থেকে ২০২৩। মাঝখানে কয়েকটা বছরের ব্যবধান। এরই মধ্যে আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখল দুই দেশ। ২০১৯ সালে আফগানদের কাছে ২২৪ রানে বড় ব্যবধানে হেরে সহস্র সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হতে হয়েছিল টাইগারদের। তিন পর তা আরও বড় ব্যবধানে ফিরিয়ে দিল লিটনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ। একেই বলে বুঝি মধুর প্রতিশোধ। ঘরের মাঠ মিরপুরে শুধু জয়ই তুলে নিলো না, নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ডও গড়লো টাইগাররা।

শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাড়ে তিনদিনেই শেষে আফগানরা। ৬৬২ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে সফকারীরদের ইনিংস শেষ হয় ১১৫ রানে। এতে ৫৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় তুলে নিলো লিটন দাসের দল। ব্যাটারদের পর বোলারদের দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের এতবড় জয়ের দেখা পেলো বাংলাদেশ দল। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এই জয় তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড।

সিরিজের একমাত্র টেস্টে আফগানিস্তানকে শুরুর দিন থেকেই চাপে রেখেছিল বাংলাদেশ। যে চিত্র বহাল ছিল চতুর্থ দিন সকালেও। আগের দিন ২ উইকেট হারিয়ে বসা আফগানিস্তান চতুর্থ দিন ব্যাটিংয়ে নেমে দিনের শুরুতেই উইকেট হারিয়ে বসে। এবাদত হোসেনের করা প্রথম ওভারে সুবিধা করতে পারেনি আফগানরা। এরপর বল হাতে নেন শরিফুল ইসলাম।

তার বলেও সুবিধা করে পারেননি আফগান ব্যাটাররা। দুটি সিঙ্গেলস নিলেও এই ওভারে ক্রমাগত ডিফেন্স করে যায় ব্যাটাররা। তবে দিনের তৃতীয় ওভারেই বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন এবাদত। নাসির জামালকে ছয় রানে বিদায় করেন তিনি।

এবাদতের লেংথ ডেলিভারি বুঝতে পারেননি নাসির। তার ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় উইকেটরক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে। দলীয় ৪৮ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় আফগানিস্তান। নাসির ফেরার পর রহমত শাহকে সঙ্গ দিতে থাকেন আফসার জাজাই। যদিও বেশীক্ষণ তাকে সঙ্গ দেয়া হয়নি আফসারের।

দিনের শুরু থেকেই দারুণ বোলিং করতে থাকা শরিফুল ইসলামের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়ার আগে ছয় রান আসে তার ব্যাটে। আউটসাইড অফে শরিফুলের লেংথ ডেলিভারিটি গালি অঞ্চলে তুলে দেন আফসার। সহজ ক্যাচটি লুফে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলীয় ৬৫ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় আফগানিস্তান।

এরপর হাশমতউল্লাহ শাহিদির জায়গায় কনকাশন সাব হিসেবে নামা বাহির শাহও ফেরেন দ্রুত। তার উইকেটটি নেন শরিফুল। খানিক পর তাসকিন আহমেদের গতি সামলাতে না পেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বসেন রহমত শাহ। এর এক ওভার পর তাসকিনের বিপক্ষে বোল্ড হন করিম জানাত।

২ উইকেট তুলে নেয়া তাসকিন আরও দুইবার আঘাত হানেন লাঞ্চ সেশনের ঠিক আগে। ফলে লাঞ্চের বিরতি পিছিয়ে দেয়া হয় আধা-ঘন্টা। যদিও শেষ উইকেটে একবার রিভিউ নিয়ে ও একবার নো বলে বেঁচে যান জহির খান। ৪ উইকেট নেয়া তাসকিনকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় সেখানেই।

যদিও তাসকিনের ওভারের শেষ বলে জহির খানের হাতে বল লাগায় রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ৯ উইকেট হারালেও ইনিংস শেষ হয়ে যায় আফগানিস্তানের। ৫৪৬ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদের শিকার ৪ উইকেট।

এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩৮২ রান তোলে বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরি এবিং মাহমুদুল হাসান জয়ের ৭৬ রানের ইনিংসে এই সংগ্রহ পায় তারা। জবাবে ১৪৬ রানেই অলআউট হয় আফগানিস্তান।

বাংলাদেশের হয়ে চারটি উইকেট নেন এবাদত। দুটি করে উইকেট নেন শরিফুল, তাইজুল ইসলাম এবং মেহেদী হাসান মিরাজ। তারপর আফগানিস্তানকে ফলোঅনে না পাঠিয়ে আবারও ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। এবারও সেঞ্চুরি আসে শান্তর ব্যাটে।

তার ১২৪ এবং মুমিনুল হকের অপরাজিত ১২১ রানের ইনিংসে ৪ উইকেটে ৪২৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। আফগানদের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৬৬২ রানের। টেস্ট ক্রিকেটে এটিই বাংলাদেশের দেয়া সর্বোচ্চ রানের লক্ষ্য। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্টে ৪৭৭ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর-

বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস): ৩৮২/১০ (শান্ত ১৪৬, জয় ৭৬; মাসুদ ৫/৭৯)

আফগানিস্তান (প্রথম ইনিংস): ১৪৬ (৩৯ ওভার) (নাসির ৩৫, আফসার ৩৬; এবাদত ৪/৪৭)

বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস): ৪২৫/৪ (ইনিংস ঘোষণা) (৮০ ওভার) (শান্ত ১২৪, মুমিনুল ১২১, জাকির ৭১, লিটন ৬৬; জহির ২/১১২)

আফগানিস্তান (দ্বিতীয় ইনিংস): ১১৫ অল আউট (রহমত ৩০) (তাসকিন ৪/৩৭)

 

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪: