ই-পেপার | শুক্রবার , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশ পোয়েটস্ ক্লাব ও সাহিত্য আন্দোলনের তিন তারকা

-সালেহ আহমদ (স’লিপক)

বাংলাদেশে শিল্প সাহিত্য সম্মেলন করে যারা বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সভা সেমিনার আয়োজন করে জাতীয় ইস্যু নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, তাদেরকে অবশ্যই সব সময় গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হয়।

 

আজকের লেখায় সেসব গুণীজনের মধ্যে থেকে তিনজন তারকা ও তাদের কর্মের কিছু বিবরণ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। প্রথমেই আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে উল্লেখ করছি আমাদের সাহিত্যের গুরুজন কবি লেখক ও সাহিত্য সংগঠক মস্কো প্রবাসী বাঙালি কবি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সৃষ্টিকর্মের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য।

 

কবি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে একজন কলাম লেখক হিসেবে দীর্ঘদিন থেকেই দেশের পত্রপত্রিকা সম্পাদকবৃন্দ ও পাঠকমহল চিনেন। তিনি ১৯৯৭ সালে রাশিয়ার মস্কোতে পোয়েটস্ ক্লাব গঠন করে ১৯৯৮ সালে দেশে এসে আমাদেরকে সাথে নিয়ে এর একটা মজবুত ভিত্তি রচনা করেন।

 

বিশেষ করে দেলোয়ার মুহাম্মদ, তাজুল ইসলাম বাঙালি, অমলেন্দু দাস মিন্টু, মনির উদ্দিন মাস্টার, আবির উদ্দিন মাস্টার, সৈয়দ হাবিবুর রহমান হিরণ, অধ্যাপক মুহাম্মদ শফিক, হৃষীকেশ রায় শংকর, আহমাদ সেলিম, জিষ্ণু দাস, সাহেদা রশীদ পপি, সুদীপ্ত মোহন মিহির, মাসুদা সিদ্দিকা রুহী, শান্তা গুপ্তা, বেলাল তালুকদার, নিলুপা ইসলাম নিলু, সাংবাদিক লিয়াকত আলী খান, গৌছুজ্জামান চৌধুরী, ছামির মাহমুদ, সুমন কুমার দাশ, সঞ্জয় নাথ সঞ্জু, এম এ আলী জালালাবাদী, শফিকুর রহমান চৌধুরী, শফিকুর রহমান শফিক, ধ্রুব গৌতম, মিফতাহ উদ্দিন লাভলু, তালেব হোসেন, সাইদুর রহমান সাইদ, মিজান মোহাম্মদ, নুরুল ইসলাম, শহীদুর রহমান সায়েদ ও সালেহ আহমদ (স’লিপক) প্রমুখদের নিয়ে বাংলাদেশ পোয়েটস্ ক্লাবের ভিত্তি রচনা করেন।

 

২০০০ সালে মস্কো থেকে চলে আসার পরে সিলেটে প্রথমে রাজা ম্যানশনে ও কবি দেলোয়ার মুহাম্মদ এর বাসায় এবং পরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়মিত সাহিত্য আড্ডার আয়োজন করে নবীন প্রবীণ কবি লেখকদের মধ্যে একটা আনন্দের ঝিলিক সৃষ্টি করতে সক্ষম হোন।

 

পরবর্তীতে দেশব্যাপী পোয়েটস্ ক্লাবের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে আরো যারা আমাদের সাথে সম্পৃক্ত হন তাদের মধ্যে কবি নাহিদ রোকসানা, সাংবাদিক এস এম মোরশেদ, সাংবাদিক আবদুর রশীদ চৌধুরী, কবি মহিউদ্দিন আকবর, কবি ড. শহীদুল্লাহ্ আনসারী, সাংবাদিক রহমত আলী, কবি লুৎফুর রহমান চৌধুরী রাকিব, সাবেক এমপি কবি লিয়াকত আলী, কবি জেসমিন আক্তার, সাংবাদিক সাগর ওয়াহিদ, কবি মীর্জা আশরাফ, কবি ফাতেমা ইসরাত রেখা, কবি আতাউল ইসলাম সবুজ, সনেট কবি আব্দুর রাজ্জাক, কবি নবাব সালেহ আহমদ, অধ্যাপক আনোয়ারা খানম, কবি মুস্তরী বেগম, ডা. মহসীনা খানম, কবি মিজানুর রহমান, কবি সেলিনা রশীদ, বাউল বিরহী কালা মিয়া, কবি আব্দুল আজিজ চৌধুরী, কবি শাহিনা জালালী পিয়ারা, কবি শহিদুজ্জামান চৌধুরী, কবি জুনায়েদ খোরাশানী, কবি আউয়াল খন্দকার, কবি নজরুল ইসলাম বাঙালী, কবি মান্না রায়হান, কবি মুকুল কেশরী, সাংবাদিক মু. আনফর আলী, অধ্যক্ষ খান আখতার, কবি মোঃ আব্দুল ওয়াহিদ, কবি নাসরিন আক্তার, সাহিত্যিক কাওছার পারভীন, কবি সুপ্রিয় বড়ুয়া, কবি আলেয়া চৌধুরী, কবি মনির উদ্দিন নজরুল, কবি সৈয়দা শিরিন আক্তার, কবি তৌফিকা আজাদ, কবি আব্দুল হামিদ সরকার, সাংবাদিক শফিউল আলম সেলিম, সাংবাদিক সজল দাস, সাংবাদিক সালেহুর রহমান বুলবুল, কবি ডা.রাধাকান্ত সিংহ, সমাজসেবী শেখ তফাজ্জুল হোসেন তবারক, কবি সূর্য দাস তপন, কবি কাজী মাহবুবা চৌধুরী, কবি শামীম আরা লাকী, কবি কেএএম জহির হোসেন মনসুর, কবি রাজিব মাহমুদ, সাংবাদিক পিন্টু দেবনাথ, কবি হাসিনা সুলতানা হেপী, কবি মনোয়ারা আক্তার মনি, চিত্রশিল্পী রফিক আহমেদ শামা, কবি সেবিকা সিনহা, শিক্ষক ছবি রানী গোস্বামী, কবি সাকেরা বেগম, কবি শামীমা রিতু, কবি আহমেদ হাসান (জ্যোতি প্রকাশ), সংগঠক দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, ছড়াশিল্পী মিনারা আজমী, কবি সৈয়দ আহমদ জাবের, কবি রিপন কান্তি ধর রূপক, কবি মুনসী তোফায়েল আহমেদ সাগর, সংগঠক আনোয়ার হোসেন তুহিন, সংগঠক সাহেদ আহমদ কোরেশী, কবি মোঃ সায়েফ উদ্দিন, গীতিকার দেওয়ান মফিজুল ইসলাম, কবি মুহিবুর রহমান সুহেল, কবি হিফজুর রহমান তুহিন, কবি মাল্যশ্রী তামান্না, কবি সায়েরা সাবেতি, আবৃত্তিশিল্পী সাদিয়া জান্নত নিছা, কবি দিলরুবা বেগম, কবি নাদিয়া মোহাম্মদ অন্যতম।

 

সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সাহিত্য আড্ডা জমে উঠেছিল তাঁদের নাম গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। বিশেষ করে শাবিপ্রবির প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, সাবেক এমপি এম আশরাফ আলী, সিলেট সিটির জননন্দিত প্রাক্তন মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, ব্যরিস্টার আরশ আলী, সদ্য প্রাক্তন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রমুখ।

 

সিলেট শহীদ মিনারে সারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কবি লেখকগণ এসে শুক্রবারের সাহিত্য আড্ডায় কবিতা পাঠ করতেন। ঢাকা থেকে নায়ক সালমান শাহ্’র মা নীলা চৌধুরীর সাথে এসে যোগদান করেন বিশ্ববাঙালি সম্মেলন উদযাপন কমিটির সভাপতি কবি মুহম্মদ আবদুল খালেক।

 

২০০২ সালের ৩০ মার্চ সিলেটর শহীদ সুলেমান হলে বাংলাদেশ পোয়েটস্ ক্লাব দিনব্যাপী আয়োজন করে বাসন্তী সাহিত্য উৎসব। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ইভেন্টে দেড় শতাধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিযোগিতায়। অনুষ্ঠানটি এককভাবে পরিচালনা করেন কবি দেলোয়ার মুহাম্মদ।

 

কবি দেলোয়ার মুহাম্মদ এর প্রাণবন্ত উপস্থাপনার জন্য-ই সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়মিত সাহিত্য আড্ডার জমজমাট মিলন মেলা হতো। তিনি স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ইতালি চলে যাওয়ার পরে উপস্থাপনার হাল ধরেন সাংবাদিক কবি তাজুল ইসলাম বাঙালি, রাজনীতিবিদ কবি সৈয়দ হাবিবুর রহমান হিরণ, কবি ছামির মাহমুদ ও কবি সঞ্জয়নাথ সঞ্জু।

 

সেই অবসর সময়টুকুতে কবি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় পোয়েটস্ ক্লাবের
শাখা প্রশাখা বিস্তার করতে সক্ষম হোন। ঢাকায় যিনি শক্ত হাতে পোয়েটস্ ক্লাবের হাল ধরেছিলেন তিনি হচ্ছেন গেদু চাচার খোলা চিঠির লেখক কলামিস্ট ও সাংবাদিক খন্দকার মোজাম্মেল হক। যিনি একান্ত বন্ধু হয়ে কবি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর পাশে ছিলেন তিনি কবি মুহম্মদ আবদুল খালেক।

২০০৯ সালের ১৯ মার্চ বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাব কনফারেন্স লাউঞ্জে বাংলাদেশ পোয়েটস্ ক্লাব এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন। সেই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ এমপি। প্রধান আলোচক ছিলেন বিটিভির ডিজি কবি কাজী আবু জাফর সিদ্দিকী।

 

বিশেষ অতিথি ছিলেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সৈয়দ মার্গুব মুর্শেদ, প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, কবি এটিএম গিয়াস উদ্দিন, কবি মুহাম্মদ আবদুল খালেক, সাংবাদিক খন্দকার মোজাম্মেল হক, কবি নাহিদ রোকসানা, কবি রবীন্দ্র গোপ সহ অনেকেই।

 

কবি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সৈয়দ হাবিবুর রহমান হিরণের পরিচালনায় সম্মেলনের পক্ষ থেকে জোর দাবী জানানো হয়, জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে মহান জাতীয় সংসদে বিল পাস করার জন্য। প্রধান অতিথি মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ এমপি আশ্বস্ত করেন জাতীয় সংসদে বিল পাস করার। যা বিটিভি আর্কাইভে এখনো সংরক্ষিত রয়েছে।

 

অল্প কিছু দিনের মধ্যে-ই জাতীয় সংসদে বিল পাস করে
জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার দাবী উত্থাপিত হয়েছে। দাবী মেনে নিয়ে ব্যয়নির্বাহের খরচ বাংলাদেশের উপর চাপিয়ে দেয়ায় তা বাস্তবতার মুখ দেখছে না।

বাংলাদেশের শিল্প সাহিত্য সম্মেলনে যে দু’জন কবি জাতির পক্ষে শক্তভাবে বিভিন্ন দাবী দাওয়া জানান তারা হলেন কবি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও কবি মুহম্মদ আবদুল খালেক। তাদের সাথে যিনি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেন তিনি গেদু চাচার খোলা চিঠির লেখক কলামিস্ট ও সাংবাদিক খন্দকার মোজাম্মেল হক।

 

আমি সাহিত্যচর্চা করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে ৪৯টি জেলা ভ্রমণ করেছি। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ পোয়েটস্ ক্লাব কর্তৃক আমাকে বিশ্ব পর্যটক ইবনে বতুতা সম্মাননা স্মারক দেয়া হয়। আমি আমার দীর্ঘ তিন দশকের সাহিত্যচর্চা ও অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বাংলাদেশের সকল কবি লেখকদেরকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে কমবেশী চিনি এবং জানি। কিন্তু কবি লেখকদের দাবী দাওয়া নিয়ে কথা বলতে আর একজনকেও দেখিনি। আজকের আলোচনায় তিন তারকার সৃষ্টিকর্মের অল্প কিছু তোলে ধরলাম। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লিখার ইচ্ছে প্রকাশ করে শেষ করছি।

 

সালেহ আহমদ (স’লিপক): কবি, সাংবাদিক, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি- বাংলাদেশ পোয়েটস্ ক্লাব।

এইচ এম কাদের,সিএনএন বাংলা২৪